খুলনার কয়রায় খালের পানি সরানো ও সংযোগ সড়কে ভেঙ্গে যাওয়া স্থান নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক আলামিন (৩৩) মারাত্নক জখম হয়। তাৎক্ষনিক আলামিনের লোকজন জড়ো হয়ে প্রতিপক্ষের লাল মিয়া নামে একজনকে আটকে রেখে মারধর করে এবং অন্যদের ধাওয়া করলে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী হায়াতখালি বাজারস্থ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মৃতি সংসদ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়। এ সময় ক্ষোভের বসে আলামিনের লোকজন ওই ক্লাবে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
গত শনিবার রাত ৭ টার দিকে উপজেলার মহারাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আলামিনের অনুসারিরা মঠবাড়ি গ্রামের সালাম বিশ্বাসের পুত্র লালমিয়া (১৭) কে পুলিশের কাছে তুলে দেয়।
আহত আল আমীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহসীন রেজা ও মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলুর ভাগ্নে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে বড় ব্রীজের সংযোগ সড়কে পানি সরবরাহের এক স্থানে ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল ও পানি নিষ্কাশনে বিঘ্ন ঘটে। এজন্য ভাঙ্গন স্থানে কয়েকজন ইজিবাইক চালক একত্রে কাজ করছিলো কিন্তু স্থানীয় প্রতিপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে বিকেলে পুনরায় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। সংঘর্ষে আলামিন খোকন ও লাল মিয়া নামে দুই গ্রুপের দুই জন ব্যক্তি জখম হয়। আলামিন খোকনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আর লাল মিয়া পুলিশ হেফাজতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে কয়রা থানার ওসি মোঃ রবিউল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আলামিনের অনুসারিরা একত্রিত হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তি হায়াতখালি বাজারে অবস্থিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা স্মৃতি সংসদের অফিসে আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে গিয়ে হামলা চালায় আলামিনের লোকজন। এসময় ক্লাবের আসবাবপত্রসহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এলোপাতাড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ক্লাবটি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদের নির্বাচনী অফিস হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ কেন্দ্রে ব্যাপক লবিং চালায়। শেষ পর্যন্ত মাহমুদ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনোনীত হন। ওই সময় থেকে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং একে অপরকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মাহমুদের নির্দেশে তার লোকেরা আমার ভাগ্নেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। এখন তারা ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে নিজেরা পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে আমাদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মাহমুদ বলেন, এলাকার কৃষি জমির পানি সরবরাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বর্তমান চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ও তার লোকজন মাছ ধরার চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় মানুষ এহেন কাজে বাঁধা দিতে গেলে তাদের পিটিয়ে বের করে দেয়। তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ক্লাবে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালানো হয়।
কয়রা থানার ওসি রবিউল হোসেন বলেন, ‘দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষিপ্ত জনতা লালমিয়া নামের একজনকে আমাদের কাছে তুলে দেয়, তাকে আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মৃতি সংসদ ভাঙচুরের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই/টি আই