খুলনার কয়রা উপজেলার ৪নং মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে সচিব মো. ইকবাল হোসেনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুলনার ইউপি সচিব ও হিসাব সহকারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি জমা দিয়েছেন।
তবে চেয়ারম্যান বলছেন ভিন্নকথা। তিনি বলেন, আমার প্রতিপক্ষ সুনাম নষ্ট করার জন্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন।
আহত ইকবাল হোসেন বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাজ শেষ করে বাড়ি আসি। আসার পরে কিবরিয়া ও হাফিজুল নামে দু’জন পুনরায় পরিষদে নিয়ে যেতে বাড়ি আসেন। তাদের কথাবার্তায় তখন আমার ভয় হয়। আমি স্থানীয় সরকার, খুলনার উপ-পরিচালক স্যারকে ফোন দিয়ে অবহিত করে বাড়ি থেকে বের হই। পরিষদে প্রবেশের সাথে সাথেই আমার মোবাইল নিয়ে নেয়। পরে পরিষদের কক্ষে দরজা দিয়ে প্রচুর পেটায়। একপর্যায়ে ইউএনও স্যার ও ওসি স্যার আসার পরে সব ঘটনা শোনেন। শোনার পরে ইউএনও স্যার আমাকে বলেন, জানাজানি হলে চাকরি চলে যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যা হবে। পরে বাধ্য হয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে চলে আসি।’
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আমাকে না জানিয়ে সচিব অফিস ত্যাগ করে চলে যান। এমন সময় একটি পঙ্গু লোক এসেছিল ওয়ারেশ কায়েম সনদের জন্য। তখন সচিবকে না পেয়ে ফোন করে পরিষদে আসতে বলি। সচিব অফিসে আসতে রাজি হননি এবং আমাকে বলেন, ‘‘আমি ১০টা থেকে ৫টা অফিস করব। এরপরে আর কাজ করতে পারব না।’’ তখন আমি নিজের মোটরসাইকেল পাঠিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনি। আমার রুমে আসার পরে কথাবার্তা হলো। সে ভুল স্বীকার করল। এরই মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসিসহ অনেকে এল। ঘটনার বিষয় নিষ্পত্তি হলো। পরবর্তীতে গুজব ছড়িয়ে পড়ল আমি ইকবালকে মেরেছি।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যে কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। মূলত আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মিথ্যা ও বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়িয়ে সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
কয়রার ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ঘটনা শুনেই আমি ও ওসি সাহেব সেখানে যাই। তখন সে (ইকবাল) বলেছে আমার কিছু হয়নি। চেয়ারম্যানের সাথে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা সমঝোতা করে দিয়েছি। তখন আমি বললাম তাহলে একটি লিখিত দেও। সে লিখিত দিয়ে চলে গেল।
তিনি আরও বলেন, এখন যদি সে পেটানোর কথা বলে তবে অভিযোগ করুক। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার খুলনার উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় (সোমবার) সে আমায় ফোন দিয়েছিল। সে বলেছিল চেয়ারম্যানের লোক তাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তখন ইউএনওকে বিষয়টি জানাই। পরে রাতে ইকবাল ফোন করে বলল কোনো সমস্যা হয়নি। আজ (মঙ্গলবার) সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইকবাল ভর্তি হলে আমি গিয়ে দেখি তার বাম হাতে ব্যান্ডেজ। তার এক্স-রে দেখে ও চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তার হাতের কয়েক জায়গায় চটে গেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ মারধর করা হয়েছে। আমি ইকবালের কাছে জানতে চাইলাম কাল রাতে কেন মিথ্যা কথা বললে, উত্তরে সে বলল আমাকে খুব ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, আমি ইউএনওকে পাঠালাম বিষয়টি দেখার জন্য, ইকবালকে সাহায্য করার জন্য কিন্তু তিনি কি করলেন বুঝতে পারলাম না। এখন আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেব।