খুলনার কয়রার সদর ইউনিয়নের দেউলিয়া বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বসতবাড়ি, দোকান ও গোডাউন পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীদের গোডাউনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রায় একঘন্টা চেষ্টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল ও মনিরুল ইসলামের মৎস্য ব্যবসার ঘরে থাকা ককসেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পাশ্ববর্তী একটি দোকানে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা তীব্র আকার ধারণ করে। এসময় স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে। দু’দিন আগে কয়রায় আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনের শিখা দেখে তাৎক্ষণিক ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রায় একঘন্টার অভিযানের পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়। কোন মানুষ হতাহত না হলেও আসবাবপত্র, অবকাঠামোসহ বসতঘর ও দোকানের মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ রাসেল আহমেদ, খোদা বকস্ গাইন, ইনসানসহ কয়েকজন জানান, সকাল থেকে এ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। সিগারেটের আগুন থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাখা ককসিটে আগুন লাগতে পারে। ককসেটে লাগা আগুন মুহুর্তের মধ্যে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের তীব্রতা যেভাবে বাড়তে ছিল তাতে ঘনবসতি এ বাজার এলাকায় কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা ছিল। কয়রায় এই প্রথম ফায়ার সার্ভিস দেখলাম। মুহুর্তের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস আসায় এ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেল ।
আরও পড়ুন: কয়রায় আগুনে দোকান, গোডাউন ও বসতঘর ভস্মিভূত (ভিডিও)
তারা আরও জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এলাকাবাসি। কয়রায় ফায়ার সার্ভিস রয়েছে সেটা জানতাম না। যদি ফায়ার সার্ভিস না থাকতো তাহলে স্থানীয়দের পক্ষে দ্রুত এ আগুন নেভানো সম্ভব হত না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাছুম বিল্লাহ বলেন, মুকুলের ক্রোকারিজের দোকানের ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এরপর আগুন ছড়িয়ে মুনছুর মোড়ল, বাবু ও রাসেলের দোকানসহ পার্শ্ববর্তী বসতঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সর্বমোট ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
সদ্য চালু হওয়া কয়রা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মো: গোলাম মোস্তফা বলেন, এক ইউনিটের একঘন্টার অভিযানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। একটি বসতঘর ও ১০টি দোকান পুড়ে ৯ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুইদিন আগে আমরা কয়রা অফিসে যোগদান করি। এটি আমাদের প্রথম অভিযান। আমাদের কাছে কেউ ফোন করেননি, অফিস থেকে আগুনের ধোয়া দেখতে পেয়ে খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থালে পৌঁছাই। আগুনের সুনির্দিষ্ট সূত্রপাত জানতে পারিনি। তবে সিগারেটের আগুন থেকে সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কোন দুর্ঘটনায় এখন থেকে কয়রা ফায়ার সার্ভিস অফিসের হট লাইন (০১৯৩০-৭৭৭৭১০) এ ফোন দিয়ে অবহিত করার আহ্বান করেন তিনি।
আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এসময় তিনি বলেন, কয়রার মানুষের বহুদিনের দাবি ছিল একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কয়রায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হওয়ায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কয়রা উপজেলা সদরে এক বিঘা জমির ওপর ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন’ নির্মিত হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট মেয়াদে সম্পন্ন করতে পারিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে ২৩ নভেম্বর রাতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে কর্মীরা আসেন এবং ২৪ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করেন।
খুলনা গেজেট/ তরিকুল