খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ মাঘ, ১৪৩১ | ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নরসিংদীতে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ১০ জন
  মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ আর নেই

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অন্যরকম ঈদ

গেজেট ডেস্ক

উদাস চোখে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতর ধর্মীয় এই উৎসবের আমেজ বেশি দেখা গেছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজ হয়। এর মধ্যে টেকনাফের লেদা, জাদিমুড়া, নয়াপাড়া ও শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট-বড় শতাধিক মসজিদ-মত্তবে ঈদের নামাজ আদায় করেছে রোহিঙ্গারা। ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং নির্যাতনের বিচার চেয়ে স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১৪২০টি মসজিদ ও ৯৪০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মত্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্টানে ঈদের নামাজ আদায় করেন রোহিঙ্গারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে টেকনাফের জাদিমুড়া, শালবন, নয়াপাড়া ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু অংশে বেলুন আর ঈদ মোবারক লেখা ব্যানারে গেইট দিয়ে রংবেরঙে সাঁজানো হয়েছে। এসব ক্যাম্পে শিশুরা সকাল থেকেই সেজেগুজে, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে। তবে শিশুদের অনেকের হাতে প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক দেখা গেছে। আবার অনেকে নতুন জামা, গেঞ্জি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি ও চশমা পরে দল বেঁধে নাগরদোলায় আনন্দে মেতে উঠছে।

টেকনাফে ক্যাম্প এলাকায় শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি জায়গায় নাগরদোলা বসেছে। এর আয়োজক নুর মোহাম্মদ (৩৫) বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের অগতের মাধ্যমে এ আয়োজন করেছি। রোহিঙ্গা শিশুরা আনন্দ উপভোগ করছে। এই মেলা কমপক্ষে তিন দিন থাকবে। গত বছরের তুলনায় শিশুরা এই বছর বেশি আনন্দ করছে।’

এদিকে টেকনাফে লেদা, জাদিমুড়া ও শালবন ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে দোকান বসিয়ে প্লাস্টিকের খেলানা ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের বন্দুক বিক্রি করছেন দোকানিরা। এসব দোকানে শিশুদের ভিড় দেখা গেছে।

জাদিমুড়া ক্যাম্পের রাস্তার পাশে বন্দুক বিক্রেতা রাফি আলম বলেন, ‘ঈদের সময় আসলে আমরা কয়েকজন মিলে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের খেলনার বন্দুক বিক্রি করে থাকি রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে। ঈদের তিনদিন এ ব্যবসা চলবে। অন্য বছরের তুলনার এবার বিক্রি বেড়েছে। চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। তাছাড়া শিশুরা বন্দুক নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করে। দুই বছর ধরে এ ব্যবসা চালাচ্ছি।’

এ বিষয়ে টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবারে ক্যাম্পে ঈদের আমেজ বেশি দেখা গেছে। আমার ক্যাম্পে ৩০টির বেশি ছোট-বড় ঈদের নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে আদায় হয়েছে। কিন্তু পানি সংকটের কারণে অনেকে ক্যাম্পের বাইরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।’

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর বশর বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছি তার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আমরা সব চেয়ে বেশি খুশি হতাম যদি নিজ দেশে (মিয়ানমারে) ঈদ উদযাপন করতে পারলে। আমাদের এখন একমাত্র স্বপ্ন মিয়ানমারে ঈদের নামাজ আদায় করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসে আহ্বান জানাচ্ছি।’

নুর বশর বলেন, ‘আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারি না। কারণ সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য শিশুদের মাঝে আনন্দ দেখা গেলেও আমাদের কোনও আনন্দ নেই। তাই ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশেষ করে নিজ ভুমিতে অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারবো সেই প্রার্থনাও করা হয়েছে।’

২০১৭ সালে ২৫ আগস্টে কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরসা রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলা চালায়। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু। এর ফলে প্রাাণ বাঁচাতে প্রাায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের বসবাস।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!