‘রিয়াল মাদ্রিদ যখন ফাইনালে খেলে, রিয়ালই জেতে’- ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলোই বলছিলেন দলটির বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। সে কথাটা প্রমাণে নিজেই দিলেন সর্বস্ব উজার করে। রীতিমতো অতিমানব বনে গিয়ে পুরো ম্যাচে করলেন ৯টি সেভ। তার অতিমানবীয় পারফর্ম্যান্সের মাঝে ভিনিসিয়াস জুনিয়র করলেন ম্যাচের একমাত্র গোলটা। তাতে ভর করেই রিয়াল মাদ্রিদ জিতল তাদের ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
লিভারপুলের এমন নিয়তির আভাস যেন ভক্ত-সমর্থকরা পাচ্ছিলেন আগে থেকেই। ফাইনাল দেখতে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সের পথ ধরার আগেই বাধা, ফ্লাইট হলো বাতিল, অনেক ভক্তের বাস যাত্রাও গেলো ভেস্তে। শেষমেশ স্পিডবোটে করে ফ্রান্সে পৌঁছালেন কেউ কেউ। ফ্রান্সে পৌঁছেও শান্তি নেই, টিকিট কেটে যখন মাঠে ঢোকার পালা, তখন কর্তৃপক্ষের নিয়মের কড়াকড়ি, আর তার ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা বাধ সাধল তাতে। ইংলিশ সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, পুলিশ এক পর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল সমর্থকদের ওপর, যাদের মাঝে উপস্থিতি ছিল শিশুদেরও। আর বাইরে এমন বিশৃঙ্খলার কারণে মাঠের খেলাও দুই দফা পিছিয়ে শুরু হলো ৩৮ মিনিট দেরিতে।
এরপরের গল্পটা লিভারপুল আক্রমণভাগ আর রিয়াল রক্ষণভাগের। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, লিভারপুল আক্রমণভাগ আর থিবো কোর্তোয়ার। শুরু থেকেই দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিচ্ছিল লিভারপুল। ১৬ মিনিটে এলো প্রথম সুযোগটা। বক্সের ভেতর থেকে সালাহর করা শটটা ঠেকালেন কোর্তোয়া, সেই সালাহ, যিনি শেষ কিছু দিনে প্রতিশোধের কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছেন বহুবার। তার শট সেভ করে হলো কোর্তোয়ার অগুনতি সেভের বউনি। পরের পাঁচ মিনিটে করলেন আরও দুটো সেভ। যার শেষটা তার আঙুল ছুঁয়ে কাঁপাল রিয়ালের বারপোস্ট। শুরুর ২৮ মিনিটে লিভারপুল প্রতিপক্ষ গোলমুখে করেছিল ৬টা শট। বিরতির আগ পর্যন্ত করে আরও দুটো শট। তবে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কোর্তোয়া। গোলের দেখা আর তাই পায়নি লিভারপুল।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে রিয়ালও অবশ্য ম্যাচে কিছুটা ভালো সময় কাটিয়েছিল। তবে লিভারপুলের জমাট রক্ষণ ভেঙে গোলটা আর করা হয়নি। একবার যখন ভেঙেছিল রক্ষণ, সে গোলটাও কাটা পড়ল অফসাইডের কাটায়। বিরতির একটু আগে লুকা মড্রিচের বাড়ানো বল থেকে বক্সের ভেতরে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন বেনজেমা। শট করতে পারেননি, বলটাও হারালেন। লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার বলটা ঠেকালেও তার হাত ছেড়ে বেরিয়ে গেল বলটা। সেটা ফেদে ভালভার্দের পা হয়ে আবার ফিরল বেনজেমার কাছে, বলটা তিনি জালেও পাঠান, তবে গোলের দেখা আর পাননি তিনি। কারণ তিনি যে ছিলেন অফসাইড অবস্থানে! ফলে বিরতিতে রিয়াল যায় গোল ছাড়াই।
বিরতির পরও লিভারপুল শুরুটা করেছিল দারুণভাবে। তবে এবার কোর্তোয়ার সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ রক্ষণও যোগ দেয় সালাহদের আক্রমণভাগকে ভোঁতা করে দিতে। তবে বিরতির একটু আগে রিয়াল আক্রমণভাগ যা করেছে, তাতে লিভারপুল রক্ষণের কাছে ‘মনোযোগটা হারানো চলবে না, নাহলে শাস্তি পেতে হবে’ এমন একটা বার্তাই চলে গিয়েছিল বটে।
সে বার্তাটা ঠিকঠাক যেন বুঝতে পারেনি অল রেডরা। ৬০ মিনিটের মাথায় যখন রিয়াল গোলটা করল, লিভারপুল রক্ষণ যেন ঘুমিয়েই পড়েছিল। ডান পাশ দিয়ে আক্রমণে উঠে এসে ফেদে ভালভার্দে রক্ষণ আর গোলরক্ষকের মাঝে দিয়ে পাস বাড়ান দূরের পোস্টে থাকা ভিনিসিয়াসকে। সেই পাস থেকেই এলো মহামূল্য গোলটা। করলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
এর আগ পর্যন্ত আক্রমণের প্রাচুর্যে থাকা লিভারপুল গোলের পর হলো আরও মরিয়া। তবে ওই যে, রিয়ালের গোলবারের নিচে সাক্ষাৎ অতিমানব যে নেমে এসেছিলেন, সেই কোর্তোয়ার কল্যাণে সমতাসূচক গোলটা আর হলো না অল রেডদের। পুরো ম্যাচে সালাহ করেছেন ৫ শট, তার প্রতিটি শটই ফিরিয়েছেন কোর্তোয়া। এক পর্যায়ে লিড ধরে রাখতে রক্ষণে আরও বেশি মনোযোগ দেয় রিয়াল। এক লিভারপুল আক্রমণে দেখা যাচ্ছিল, রীতিমতো বেনজেমাও নেমে এসেছেন রক্ষণে!
তবে রিয়ালের এমন চেষ্টা শেষমেশ বৃথা যায়নি। সাদিও মানে, মোহামেদ সালাহদের আক্রমণ থামিয়ে শেষমেশ কার্লো অ্যানচেলত্তির দল জেতে শিরোপা। ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাও ট্রফিকেসে তোলা নিশ্চিত করে দলটি।