প্রায় কোটি টাকা খরচ করে খুলনা নগরীর দৌলতপুর বাজারে সড়ক নির্মাণ করছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। সম্প্রতি সড়কের ১৯০ মিটার কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এখন চলছে কিউরিং এর (কংক্রিটের জমাটকে শক্ত করার জন্য পানি দিয়ে আর্দ্র রাখার পদ্ধতি) কাজ।
এরই মধ্যে সড়ক দখল করে দোকান স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাজার কমিটির নেতা ও রেলওয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তা। গত ২৯ আগস্ট রাতে সড়কে লাল দাগ দিয়ে দোকানের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। দোকান বসাতে খাট ও কাঠের বিভিন্ন স্থাপনা আনা হয়েছে। এলাকাবাসির আশঙ্কা, যে কোনো সময় নির্মাণাধীন সড়কটি দখল করে সেখানে দোকান বসবে।
দৌলতপুর বাজারের ব্যবসায়িরা জানান, বাজারে প্রায় দুই হাজার দোকান রয়েছে। কিন্তু চলাচলের তেমন সড়ক নেই। এই সড়ক দিয়ে ব্যবসায়ি, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ হাটাচলা করে। ভাঙাচোরা সড়ক নতুন করে নির্মাণ করায় সাধারণ মানুষ খুশি হয়েছিলো। কিন্তু সড়ক দখলের প্রস্তুতি দেখে তারা উদ্বিগ্ন। এর প্রতিকার চেয়ে গত ২২ আগস্ট কেসিসির স্থানীয় কাউন্সিলর ও দৌলতপুর থানা পুলিশ এবং ২৩ আগস্ট সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন তারা। কিন্তু দখল তৎপরতা থেমে নেই।
সড়ক দখলদারদের তৎপরতায় ক্ষুব্ধ কেসিসির পূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারাও। সড়কটির তদারকির দায়িত্বে থাকা কেসিসির উপ-সহকারি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, কাজ চলা অবস্থায় কয়েকজন খাট নিয়ে এসেছে দোকান বসাবেন বলে। অনেক কষ্টে তাদের ফিরিয়েছি। বুধবার রাতে কে বা কারা সড়কের ওপর লাল দাগ দিয়ে দোকানের সীমানা চিহ্নিত করেছে সেটা জানিনা।
তিনি বলেন, সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, বিলও তৈরি হয়নি। এর মধ্যেই সড়কটি দখল হয়ে গেলে খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। বিষয়টি লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবো।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর পুরাতন ব্যবসা কেন্দ্রের মধ্যে দৌলতপুর বাজার অন্যতম। প্রায় শত বছরেরও আগের এই বাজারের সড়কগুলো অত্যন্ত সরু। একপাশে রেললাইন, সড়কের দুই পাশে দোকান থাকায় সেখানে মানুষের হাটাচলার উপায় ছিলো না। বাজারের ব্যবসায়ি ও স্থানীয়দের অনুরোধে দৌলতপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ সড়ক মেরামত কাজ শুরু হয়। প্রায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ২৫৯ মিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কের পাশে ড্রেন হবে ৬২৭ মিটার। ইতোমধ্যে ১৯০ মিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রেল লাইনের পাশে নতুন সড়ক নির্মাণের পরে বাজারের চেহারাই পাল্টে গেছে। আগের ঘিঞ্জি পরিবেশ এখন আর নেই। নতুন সড়ক দিয়ে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করছে মানুষ। তবে রেললাইনের উল্টো পাশের রাস্তা দখল করে বসা দোকানগুলো স্থায়ী হয়েছে। ওই অংশ দিয়ে হাটার পরিবেশ নেই।
নির্মাণাধীন সড়কে দেখা গেছে, নতুন ড্রেন ফুটপাতসহ সড়কটি গড়ে ৮/১০ ফুট চওড়া। এর ৩ ফুট পরপর লাল দাগ দেওয়া হয়েছে। লাল দাগের ভেতরেই খাটসহ দোকানের আসবাব রাখা।
দৌলতপুর বাজারের ব্যবসায়ি মো. মাহবুবুল হক বলেন, বাজারে যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। সড়কের ওপর দোকান বসালে মানুষ হাটাচলা করবে কিভাবে? বিষয়টি লিখিতভাবে মেয়রসহ প্রশাসনের সবাইকে জানিয়েছি।
দৌলতপুর বাজার উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, সড়কের মাত্র ৩ ফুট জায়গায় দোকান বসবে। বাকি অংশ দিয়ে মানুষ চলাচল করবে। কোনোভাবেই বাড়তি জায়গা লাগবে না।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, মানুষ চলাচলের জন্য সড়ক হচ্ছে। সেখানে দোকান বসতে পারবে না। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।
খুলনা গেজেট/ টি আই