খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিঁখোজ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি
  বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ, বাজারজাতকারীকে ১৬ লাক টাকা জরিমানা

কেশবপুরে পানিবন্দি ১০ গ্রামের মানুষ, ভুগছে নানা রোগে

মেহেদী হাসান জাহিদ, কেশবপুর

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে ঘেরের ভেড়ি তৈরির কারণে ২ টি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে আছে। অতিবর্ষণে বিল খালে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির বোরোধান আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এলাকায় পানিবাহী রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ,মানুষের অবর্ণনীয় দূর্ভোগের চিত্র। মানুষের চলাচল করতে খুব সমস্যা, ঘরবাড়ি থেকে বের হতে গেলে বাঁশের সাকো বা ডিঙ্গী নৌকার সাহায্য নিতে হয়।

১৯৮৮ সালে বন্যার কারণে কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া ও সুফলাকাটী ইউনিয়নের বিলসমূহ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার কৃষক তাদের পেশা বদল করে ফেলে। অনেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে শহরে রিক্সা চালায়। আবার অনেকে বিল খালে শামুক কুড়িয়ে, মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করেন। ২০০০ সালে বিল এলাকার প্রভাশালী কৃষক বিলগুলোকে ঘেরের আওতায় নিয়ে তাদের ঘেরে মাছ চাষ শুরু করেন। এই মাছের ঘেরে অপরিকল্পিত ভেড়ি বাঁধের কারণে বিল এলাকার মানুষের বসতবাড়ি প্রায় ১২ মাসই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। মানুষের মাঝে পানিবাহিত রোগসহ নানা প্রকার চর্মরোগ দেখা দেয়। জলাবদ্ধতার কারণে ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো ও দৈনন্দিন জীবন চিত্র।

ভবদাহ প্রকল্পের আওতায় পাঁজিয়া ও সুফলাকাটী ইউনিয়নে কালিচরণপুুর, বাগডাঙ্গা, মনোহর নগর, বেতিখোলা, মাদারডাঙ্গা, পাথরঘাটা, আড়ুয়া, নারায়নপুর, ময়নাপুর, গৃধরনগর গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে বাগডাঙ্গা মোনহরনগর গ্রামের মানুষ ১২ মাসই পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।

গ্রামের মনোরজ্ঞন মন্ডল জানান, আমরা গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সমস্যা সমাধানে কারোর কোনো উদ্যোগ নেই। পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির ভুমিকা আমাদের হতবাক করেছে।

বেতিখোলা গ্রামের মাষ্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত মাছের ঘের ভেড়ির কারণে বিল এলাকার পানিনিষ্কাশনে বাধা। তাছাড়া বোরোধান আবাদের জন্য ঘেরের পানি স্যালোমেশিন দিয়ে খাল-বিলে দেওয়ায় পানি বৃদ্ধির কারণে ও সম্প্রতি বর্ষনের ফলে মানুষের বাড়িঘর আবারও প্লাবিত হয়েছে। শীতের সময় গ্রামের মানুষের সর্দি, জ্বর, কাশি, ঘা পাঁচড়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

২৭ বিল পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বাবর আলী গোলদার বলেন, শ্রী নদীতে পলি পড়ে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বিলের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ঘেরের পানি ফাঁকা জায়গায় নিষ্কাশনের কারণে গ্রামে ঢুকে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ করে বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া বেতিখোলা বিলে আকবার আলীর ঘেরের ভেড়ি ভেঙ্গে গ্রাম প্লাবিত হয়ে বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ভবদাহ সংলংগ্ন ২৭ বিলের সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

মঙ্গলবার কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী মুন্সী আসাদুল্লাহ বলেন, ভবদাহ সংলগ্ন ২৭ বিলের পানি কাটাখালি স্লুইসগেট হয়ে ডায়ের খালের আট ব্যান্ড স্লুইসগেট দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু শ্রী নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ভবদাহ প্রকল্পে শ্রী নদী অন্তর্ভূক্ত আছে। ভবদাহ প্রকল্প অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পর এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!