করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই কেশবপুর পল্লী বিদ্যুতের বিল আদায় কার্যক্রম। জরুরি সেবার নামে যথারীতি অফিস খোলা রেখে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। এমনকি বিল দিতে আসা গ্রাহকদের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য কোন সার্কেল (বৃত্ত) করা হয়নি। ফলে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের বিধানও। এতে করে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল ৯ টা থেকে কেশবপুর জোনাল অফিসে সাধারণ দিনের মতই বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করতে দেখা গেছে। বিল গ্রহণের জন্য অফিসের ক্যাশিয়ারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও যথারীতি অফিসে হাজির রয়েছেন। তবে, গ্রাহকদের লাইনে দাঁড়িয়ে বিল প্রদানের ক্ষেত্রে অফিস কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এমনকি, গ্রাহকদের দাঁড়ানোর জন্য কোন ধরণের সার্কেল (বৃত্ত) এঁকে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি তারা। ফলে সকাল থেকে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামের সাধারণ মানুষ বিল দিতে এ অফিসে ভিড় করেন।
সরকার যেখানে সকলকে ঘরে নিরাপদে থাকতে উৎসাহিত করছে, সেখানে বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করায় অনেক গ্রাহকই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকারের আশঙ্কায় সাধারণ গ্রাহকরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
এছাড়াও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে কেশবপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মিটার রিডার গ্রাহকের বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়নি। অফিস থেকে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে পরিশোধ করার তাগিদ দেওয়া হয়। কিছু কিছু এলাকায় মিটার রিডারম্যান না গেলেও অফিস থেকে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকের ঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
মনগড়া বিদ্যুৎ বিলে পুর্বের বিলের চেয়েও দ্বিগুন, তিনগুন বেশী টাকার পরিমান বসিয়ে বিল দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকার কয়েকশত গ্রাহক অভিযোগ করেন। মিটার রিডিং না দেখে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার পর অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল সংশোধন না করে সময়ের অভাবে ও করোনা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন বলে সরজমিনে পরিদর্শনকালে আব্দুল করিম ও আব্দুর রহমান নামে দু’জন গ্রাহক এ অভিযোগ করেন।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মনগড়া অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে গ্রাহকেরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ছুটে এসে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে বিদ্যুৎ বিল সংশোধন করে সংশোধিত বিলের টাকা পরিশোধ করছেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস ঘুরে কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে জানা গেছে , পূর্বের পরিশোধ করা বিলের টাকাও নতুন বিলের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যেসব গ্রাহকদের পুরাতন বিল পরিশোধের কপি সংরক্ষিত রয়েছে তারা পরিশোধিত বিলের কপি দেখাতে পারলে সেই বিলের টাকা বাদ দিয়ে জমা নিচ্ছেন।তবে পূর্বের পরিশোধ করা বিলের কপি যে সব গ্রাহকের কাছে সংরক্ষিত নেই তাদেরকে পূর্বের মাসের পরিশোধিত বিলও পুনরায় দিতে হচ্ছে বলে গ্রাহক আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন ।
পল্লী বিদ্যুতের কেশবপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল লতিফ জানান, বিল নেয়া হচ্ছে। তবে অফিসে বেশি গ্রাহক বিল দিতে আসছেন না। সর্বোচ্চ ১০, ১৫, ২০ জন করে বিল দিচ্ছেন। তাদের তিন ফুট করে দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। তবে কোন সার্কেল বা বৃত্ত করা হয়নি, প্রয়োজন হলে করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিলে বেশি বা পূর্বের পরিশোধিত বিলের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকে বিল জমা দেওয়ায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে সেটার সমাধানও করা হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনেই বিদ্যুৎ বিল প্রদান ও গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে কাউকে বিল দিতে জোর করা হচ্ছে না, লাইন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না।
বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক সেটি বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন সচেতন মহল।
খুলনা গেজেট/ টি আই