খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৬০
  হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত, নিশ্চিত করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি
  ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি

কুমার পাড়ায় রস ও গুড়ের পাতিল তৈরীর মহোৎসব

কেশবপুর প্রতিনিধি

খেজুরের রস ও গুড়ের মৌসুমকে সামনে রেখে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মৃৎ শিল্পীরা এখন খেজুরের রস, গুড় সংরক্ষণের জন্য ভাড় ও কলসী তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে।

শীত আসলেই পাল সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের দম ফেলার ফুসরত থাকেনা। ভাড় তৈরির প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি যা দূরের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে কোদাল দিয়ে কয়েকবার ঝুরঝুরে কেটে পা দিয়ে ছেনে মোলায়েম করা হয়। মোলায়েমকৃত মাটি বোলে দিয়ে বালির সংমিশ্রণে মাটি চাপড় বানানোর পর ছাঁচে দিয়ে হাতের কারুকার্য দিয়ে ভাড়ের কানাসহ ভাড়ের উপরিভাগ তৈরি করা হয়। এই ছাঁচে ভাড়ের নীচের অংশ তৈরির পর পৃথক দুটি অংশকে জোড়া লাগিয়ে দুদিন রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানো ভাড়ে রং লাগিয়ে পাজায় (আগুনে) ৫ ঘন্টা ব্যাপী পোড়ানোর পর তৈরি হয় পরিপুর্ন রস সংগ্রহের উপযোগী ভাড়।

কেশবপুরের কুমারদের অনেকেরই আজ আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য পাতিল তৈরী করে। মৃৎ শিল্প ব্যবসা মৌসুমী হওয়ার কারণে সরা বছর বসে কাটাতে হয়। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরেও উপজেলার বরনডালী, গোপালপুর, বুড়িহাটী, গৌরীঘোনা, ভেরচী, বুড়–লী, কলাগাছি গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় বাপ-দাদার এ আদি পেশাটি আকড়ে ধরে আছেন।

ইতি মধ্যে এ অঞ্চলের গাছিরা গুড় উৎপাদনে রস আহরণের জন্য খেজুর গাছ তোলার কাজ শুরু করেছে।ইতোমধ্যেই রস ও গুড় উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে কেশবপুরের গাছিরা। এ জন্য গাছিদের প্রয়োজনীয় উপকরণ ভাড়ের যোগান দিতে মৃৎ শিল্পীরা দিন-রাত এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার গৌরীঘোনা গ্রামের (পাল) কুমার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, রবীন পাল ও তার স্ত্রী পারুল রাণী একমনে হাতের কারু কার্যের নিখুঁত ছোয়ায় ভাড় তৈরী করে চলেছেন।ছাঁচে ভাড় তৈরির নান্দনিক দৃশ্যটি খুবই মনোমুগ্ধকর। ভাড় বানানোর দৃশ্য অবলোকনের জন্য যে কেউ থমকে যাবেন।

ভেরচী গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার পাল পাড়ার অনেক বাড়ির নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ভাড় তৈরিতে এতো ব্যস্ত যে কারো সাথে বাড়তি কথা বলার সময় তাদের নেই। তবুও ব্যবস্ততার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় ভাড় তৈরিতে পুলিন, বিষ্ণুপদ,রাস মনিসহ কয়েক জন মৃৎ শিল্পীর সাথে। তারা বলেন শীত এলেই ভাড় ও কলসী তৈরির কাজে শুধু পুরুষ নয় বাড়ির গৃহিনী থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েরাও পড়ালেখার ফাঁকে তাদের বাবা মায়ের কাজে সাহায্য করছে।

মৃৎ শিল্পী পারুল রাণী বলেন, প্রতিদিন তিনি ও তার স্বামী মিলে ৫০ থেকে ৬০টি ভাড় তৈরি করতে পারেন। মৃৎ শিল্পী গোপাল ও জয়দেব পাল বলেন, প্রতিটি ভাড় ১২/১৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। আর ভাড় ও কলসী বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া ও সংসারের খরচ যুগিয়ে থাকে।

খুলনা গেজেট/ বিএমএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!