মহাকাশে পাঠানোর পর থেকেই অভূতপূর্ব ও চাঞ্চল্যকর সব ছবি পৃথিবীতে পাঠাতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
সবশেষ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি কার্টহুইল গ্যালাক্সির (ছায়াপথ) ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। নাসা ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
টেলিস্কোপটি ‘কার্টহুইল গ্যালাক্সির’ স্পষ্ট ও রঙিন স্থিরচিত্র ধারণ করতে সফল হয়। মহাবিশ্বের বিশাল শূন্যতা ও সময় অতিক্রম এবং বিপুল পরিমাণ ধুলোরাশি ভেদ করে অভূতপূর্ব স্বচ্ছতার সঙ্গে রঙিন গোলাকার এই গ্যালাক্সির ছবি তুলতে পেরেছে এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছে।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে স্কাপ্টর নক্ষত্রপুঞ্জে এর অবস্থান। দুটি ছায়াপথের মধ্যে ব্যতিক্রমী ও নিয়ন্ত্রিত সংঘর্ষের ফলে বিশেষ চাকাকৃতির রঙিন এই গ্যালাক্সির জন্ম হয়।
সংঘর্ষের পর যে ভয়াবহ শক্তি সেখানে তৈরি হয়েছিল এর ফলে গ্যালাক্সিটিতে দুটি রঙিন রিং বা বলয়ের সৃষ্টি হয়। এই দুটি বলয়ের কারণে গ্যালাক্সিটিতে রঙিন আলোর ঢেউয়ের মতো অবয়ব দেখা যায়।
নাসা ও ইএসএ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, একটি পুকুরে পাথর ছুড়ে মারলে যেমন ঢেউ তৈরি হয় তেমনি এই গ্যালাক্সিটিকে ঘিরে রঙিন আলোর ঢেউ খেলা করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি ছোট সাদা রিং বা চাকতি গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান করছে। আর বাইরের বলয়টি, তার বাহারি রঙের স্পোকসহ, প্রায় ৪৪ কোটি বছর ধরে মহাবিশ্বে প্রসারিত হচ্ছে।
বাইরের বলয়টি প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো অনেক সময় স্ফুলিঙ্গের মাধ্যমে নতুন নক্ষত্রে পরিণত হয়।
হাবল টেলিস্কোপের আগে বিরল এই রিং গ্যালাক্সি বা বলয় আবৃত্ত এই ছায়াপথের ছবি ধারণ করেছিল। এটিকে একটি ছোট অনুপ্রবেশকারী গ্যালাক্সি আঘাত করার আগে পর্যন্ত একে আমাদের নিজস্ব মিল্কিওয়ের মতো একটি সর্পিল গ্যালাক্সি বলে মনে করা হতো।
এর আগে গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো জেমস ওয়েবে তোলা ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে উচ্ছ্বসিত হন স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। টুইট বার্তায় জেমস ওয়েবের তোলা প্রথম ছবি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ অভিযাত্রার জন্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে তুলে ধরে জেমস ওয়েবের প্রথম ছবি। এবং এটি আমেরিকা ও পুরো মানবজাতির জন্য।’
নাসার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১১ জুলাই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেমস ওয়েবের তোলা ছায়াপথ গুচ্ছের প্রথম ছবি SMACS 0723 হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে উন্মোচন করেন।
জেমস ওয়েবের তোলা ছবির সিরিজের ফুল-কালার ছবি ও ডাটা, যা স্পেকট্রা নামে পরিচিত, সেসব নাসার লাইভ টেলিভিশন ব্রডকাস্টে প্রকাশ করে।