খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের
  ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত : রয়টার্স; জীবিত কারও সন্ধান মেলেনি : রেড ক্রিসেন্ট

কাল রোজা, দু’দিন আগেই ইফতার বাজারে আগুন

গেজেট ডেস্ক

আর মাত্র একদিন পরেই পবিত্র রমজান শুরু। দুই দিন আগেই আগুন লেগেছে ইফতারির বাজারে অন্যতম উপকরণ খেজুর, বেগুন, পিয়াজ, শরবত, লেবু, চিনি, ডালসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে আরেক দফা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে,  ইফতারির অন্যতম উপকরণ শসা। বাজারে এখন তিন ধরনের শসা পাওয়া যাচ্ছে। দেশি দুই ধরনের এবং একটি হাইব্রিড। হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি এক জাতের শসা ১১০ থেকে ১২০ এবং অন্যটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অথচ ১০-১২ দিন আগেও দেশি ও হাইব্রিড দুই জাতের শসার কেজি কেনা গেছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

গত বছর রোজার দুই দিন আগেই শতক ছুঁয়েছিল বেগুন। তবে এবার দর শতকে না গেলেও কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়। মরিচের দরও গত বছরের চেয়ে কিছুটা নাগালে আছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়। গত বছর এ সময় ১০০ থেকে ‌১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে বাজারে শসা, বেগুন কিংবা মরিচের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়নি।

চিনির বাজারে অস্বস্তি 

ডলার ও বিশ্ববাজারে দর বাড়ার প্রেক্ষাপটে আমদানিকারকদের অনুরোধে গত দুই বছরে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে চিনির দর। তবে যতবারই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে আমদানিকারকরা দর নির্ধারণ করেছেন, তা একবারও বাস্তবায়ন হয়নি। এবার রোজায় চিনির বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমদানিতে যে পরিমাণে শুল্ক কমিয়েছে, তাতে কেজিতে ৫০ পয়সার মতো কমার কথা। তবে এক মাস পার হলেও বাজারে সেই বাস্তবতা নেই। বরং উল্টো বেড়েছে দাম। গতকালও প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা এবং প্যাকেট চিনির কেজি ১৪৬ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ প্যাকেটের গায়ে দর লেখা ১৪৬ টাকা। তবে দেশে উৎপাদিত আখের চিনির দর আরও বেশি, প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে চিনির দর এক বছরে বেড়েছে ২৭ শতাংশ।

হঠাৎ অস্থির লেবুর বাজার

দেশের উৎপাদন দিয়েই চাহিদা মেটে লেবুর। আমদানির প্রশ্ন না থাকায় লেবুর সঙ্গে ডলারের দর বাড়ার সম্পর্ক নেই। তবু অস্বাভাবিক লেবুর দাম। ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। তবে আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। অবশ্য বড় বাজারে দু-এক টাকা কমে মিলছে।
গাজীপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা থেকে লেবু এনে ঢাকায় পাইকারি বিক্রি করেন মো. শান্ত। সমকালকে তিনি বলেন, বছরের এ সময়টাতে লেবুর দর কিছুটা বেশি থাকে। তা ছাড়া রমজান চলে আসায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেশি।

লেবুর এমন আগুন দামে হতভম্ব খোদ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। গতকাল ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে কাঁচাবাজার বণিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে দেখলাম এক হালি লেবুর দাম ৬০ টাকা। তাতে একটির দাম পড়ে ১৫ টাকা। অথচ একটু আগে আমার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে ফোন করে জানলাম, সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি লেবু ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে একটা লেবুর দাম হয়ে যাচ্ছে তিন গুণ।’

খেজুরসহ ফলের দাম বাড়লো আরেক দফা

গত দুই দিনে ফলের দাম বেড়েছে আরেক দফা। মালটার দর ২৮০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। আপেলের কেজিও ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। তরমুজের কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। কলা কিনতেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বলছে, বছরে খেজুরের চাহিদা রয়েছে প্রায় এক লাখ টন। দেশে উৎপাদন না হওয়ায় চাহিদার পুরোটাই আমদানি হয় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে। শুধু রমজানে দরকার হয় ৫০ হাজার টন। তবে ডলারের দর বাড়ার পাশাপাশি এবার উচ্চ শুল্ক রয়েছে খেজুরে। আমদানিকারকদের দাবি, সাধারণ মানের এক কেজি আমদানিতে ১৪০ টাকার মতো শুল্ক দিতে হচ্ছে। বাজারে এর প্রভাব জ্বলন্ত। এক মাস ধরেই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। নিম্ন আয়ের মানুষ সাধারণত জায়েদি খেজুর কেনেন। গত বছরের ১৪০ থেকে ১৬০ টাকার দরের সাধারণ মানের বা জায়েদি খেজুর এবার কিনতে হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। উন্নত মানের খেজুরে দাম বেড়েছে আরও বেশি। মরিয়ম ও আজওয়া খেজুরের কেজি গত বছর ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। দাম বেড়ে এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। এ ছাড়া খুরমা ও দাবাস খেজুর কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। টিসিবির বাজারদর বলছে, খেজুরের দাম এক বছরে বেড়েছে ২২ শতাংশ।

ছোলা, অ্যাংকর-খেসারি ডাল, বেসন

ইফতারি তৈরিতে ছোলা, অ্যাংকর ডাল ও বেসন পণ্য অপরিহার্য। গত দু’দিনে কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। গত বছর এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। পিছিয়ে নেই অ্যাংকর ডাল। গত তিন দিনে এ ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এ ছাড়া বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। গতকাল ক্রেতাদের চাপে কারওয়ান বাজারে খেসারি ডালে কিছুটা টান দেখা গেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগে কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়।

এদিকে রমজানে কাঁচামরিচ, আলু, শসা, বেগুনসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম যেন স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো অসাধু ব্যক্তি যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে এ খাতের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল রোববার এফবিসিসিআইর কাঁচামাল আড়তদার ও সরবরাহ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!