খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২৭ মে, ২০২৪

Breaking News

কালিগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসায় গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে উল্টো মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের কাটুনিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটার পর গত ২ জুলাই সুশীলনের এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রামবাসীর নামে কালিগঞ্জ থানায় এই মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ জুন কালিগঞ্জ-রতনপুর সড়কের কাটুনিয়া মাদ্রাসার সামনে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের এক কর্মীর মোটরসাইকেলের সাথে অপরদিক থেকে আসা একটি মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে রবিউল শেখ নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। এসময় কাটুনিয়া গ্রামের ইউনুস, জাকির,শহিদুল, শাহ কামালসহ এলাকার ১০/১৫ ব্যক্তি রবিউলকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে স্থানীরা আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য ওই এনজিও কর্মীর কাছে এক হাজার টাকা সহযোগিতা করার জন্য আহবান জানান। এনজিও কর্মী তখন তাদের কাছে ৫০০ টাকা দেন এবং আহত ব্যক্তির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবেন বলে অঙ্গিকার করেন। কিন্তু পরদিন ওই এনজিও কর্মীর পক্ষ নিয়ে এনজিও অফিসের বাড়িওয়ালা আজিজুল মাস্টার আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য আর কোন টাকা দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। এনিয়ে কোন ঝামেলা করলে উল্টো চাঁদাবাজি মামলার হুমকি দেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে কথা কাটাকাটি হলে ওই দিন রাতেই আজিজুল মাস্টারের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি কাটিনিয়া গ্রামের মোঃ ইউনুস আলী, জাকির হোসেন, মোঃ শাহ কামাল, মোঃ শহিদুল ইসলাম ও মজিদ ভাঙ্গির বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা কালিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার ২দিন পর গত ২জুলাই আজিজুল মাস্টারের পক্ষ নিয়ে সুশীলনের এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রামবাসীর নামে কালিগঞ্জ থানায় একটি মিথ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সেই ঘটনার কোন তদন্ত না করেই মিথ্যে চাঁদাবাজির মামলাটি রেকর্ড করে একজন গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে।

কাটিনিয়া গ্রামের ইউনুস ভাঙ্গি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সহযোগিতায় তার চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসীর সাথে আমিও গিয়েছিলাম। চিকিৎসার খরচ দাবি করায় তৃতীয় পক্ষ আজিজুল মাস্টারের নেতৃত্বে আমার বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করেছে। ওই ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করলে উল্টো আমাকেসহ গ্রামবাসীর নামে মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। আমরা পুলিশের কাছে আগে অভিযোগ করেছি কিন্তু পুলিশ আমাদের অভিযোগের কোন তদন্ত না করে সুশীলনের দায়ের করা মিথ্যা মামলাটি রেকর্ড করেছে। ইতিমধ্যে আমাদের গ্রামের একজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুশীলন অফিসের এক নারী কর্মী জানান, প্রকৃত ঘটনা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত লোকটির ডাক্তার খরচের জন্য গ্রামবাসীরা ম্যানেজারের সাথে আলোচনা করে কিছু টাকা চেয়েছিল। অফিস থেকে তাদের কাছে প্রথমে পাঁচশ’ টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা পরদিন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাড়ির মালিক আমাদের অফিসের ম্যানেজারের পক্ষ নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। এ সময় আগের দেয়া ৫শ’ টাকাও ফিরিয়ে দেয় গ্রামের লোকজন। শুনেছি সেদিন রাতে কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এরপর কী হয়েছে তা আমার আর জানা নেই।

এ বিষয়ে সুশীলনের কাটুনিয়া কদমতলা শাখার ম্যানেজার প্রণব কুমার মন্ডল বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য আমি পাঁচ শত টাকা দেই। কিন্তু গ্রামের কিছু যুবক এসে আমাদের কাছে আরো ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। এরমধ্যে অফিসের বাড়ির মালিক আজিজুল ইসলাম বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন। কিন্তু কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে গ্রামের কিছু যুবক বাড়ির মালিকের উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে। এঘটনায় আমি নিজেও আহত হই। পুরো বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর বাইরে আমাদের সাথে গ্রামবাসীর কোন ঝামেলা হয়নি। বাড়ি ঘরে হামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

মামলার বাদী সুশীলনের এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরদিন আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ছোট একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের অফিসের কর্মীদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা দিতে না চাওয়ায় বাড়ির মালিক ও আমাদের অফিসের কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। এজন্য কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি মামলাটি দায়ের করেছি। তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হালিমুর রহমান বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!