খুলনা-বরিশাল বিভাগসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর গঠন করা হয় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও খুলনাবাসীর সেই আশা পূরণ হয়নি।
গত ১৫ বছরে খুলনাসহ ১৯টি জেলাতেই গ্রাহক তৈরি করতে পারেনি পেট্রোবাংলা নিয়ন্ত্রিত সংস্থাটি।
অথচ খুলনায় গ্যাসের গ্রাহক না থাকলেও কোম্পানির আলিশান ভবন আছে। কর্মকর্তাদের জন্য আছে গাড়ি। রয়েছে ৫৮ জন কর্মকর্তাসহ কর্মচারীর বিশাল বহর। বেতন-ভাতাসহ পরিচালন খাতে কোম্পানির বছরে ব্যয় ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিশাল জনবল ও বিপুল ব্যয় সত্বেও কাংখিত গ্যাস না পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ খুলনার মানুষ।
২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষিণাঞ্চলে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয় আওয়ামী লীগ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় (খুলনা বিভাগের ১০, বরিশালের ৬ জেলা এবং ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর) গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর সেখানে যায় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। তবে গেল ১৫ বছরে ভোলা ও কুষ্টিয়া ছাড়া অন্য ১৯ জেলায় গ্যাস সংযোগই দিতে পারেনি কোম্পানিটি।
খুলনাসহ এসব জেলায় কোম্পানির কোনো গ্রাহক নেই, ফলে সেখানে নেই কাজও। কর্ম না থাকলেও আছে বিশাল জনবল বহর। শুধু খুলনার কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই জনবল সংখ্যা ১৩১। এর মধ্যে ৫৮ জনই কর্মকর্তা। কর্মহীন এ অফিসে বছরে খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে ৮৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা এবং প্রশাসনিক ও অফিস পরিচালনে মাসে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা খরচ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ৯৫ শতাংশ কাজ ভোলা ঘিরে। বর্তমানে কোম্পানির গ্রাহক ২ হাজার ৩৯১ জন। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় মাত্র ৪। বাকি ২ হাজার ৩৮৭ গ্রাহক ভোলায়। ভোলার ২ হাজার ৩৭৪ জন গ্রাহক আবাসিক।
সূত্রটি জানায়, কুষ্টিয়া বিসিকের দুটি এবং খুলনার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন টানা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ হবে বলতে পারেননি কোম্পানির কর্মকর্তারা। এর আগে ‘দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত স্থাপন করা হয় গ্যাস পাইপলাইন। এরপর ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।
গ্ৰাহক বাড়ছে না কেন
গ্ৰাহক তৈরি না হওয়া ও কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে গ্যাস কোম্পানির কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের গ্রাহক তৈরি হওয়ার জন্য সরকারের জ্বালানি নীতি দায়ী। তাদের ভাষ্য, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আবাসিক, বাণিজ্যিক ও সিএনজি শ্রেনিতে নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। আবার পরিকল্পিত শিল্প নগরী ছাড়া শিল্প শ্রেণিতেও নতুন সংযোগ বন্ধ।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকায় জাতীয় গ্যাস গ্রিডের নিচের দিকে থাকায় এখানে গ্যাসের চাপ কম থাকে। যর কারণে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং খুলনার ২২৫ মেগাওয়াটসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভোলা ও কুষ্টিয়ার ২ হাজার ৩৯১ গ্রাহককে বর্তমানে দৈনিক ৯০-১১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে ভোলা সদর ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে।
এছাড়া খুলনার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দিতে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। দ্রুত সেখানে গ্যাস যাবে। ভবিষ্যতে ভোলার একটি টেক্সটাইল মিল, খুলনা, যশোর ও ঝিনাইদহ বিসিক শিল্পনগরীতে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা আছে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়