বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সারাদেশে মহান শহীদ ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। তবে সরেজমিনে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা কলেজের চিত্র দেখা গেছে ভিন্ন। কেননা কলেজটিতে নেই শহীদ মিনার। যদিও সরকারি আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক। তবে অন্যান্য বছর গুলোর ন্যায় এ বছরেও একুশে ফেব্রুয়ারিতে নানা আয়োজন করা হলেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেননি কলেজের তিন হাজার শিক্ষার্থী ও শতাধিক শিক্ষকরা।
প্রসঙ্গত, ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনটিতে ভাষার দাবীতে বাংলার দামাল ছেলেরা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। তাঁদের আজকের এইদিনে স্মরণ করতে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার।
১৯৯৭ সালে সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কের কোল ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত হয় ঝাউডাঙ্গা কলেজ। যার প্রতিষ্ঠাতা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃতি সন্তান আলহাজ্ব এসএম শওকত হোসেন। তবে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে কলেজটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বরাবরের ন্যায় এবারেও শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে তাদের প্রায় অজানাই থেকে যাচ্ছে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের গুরুত্ব।
সরেজমিনে এব্যাপারে ওই কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়া পারভীন জানান, কলেজে শহীদ মিনার নেই তাই ইচ্ছা থাকলেও ফুল দিয়ে মহান ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না।
অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সুব্রত ঘোষসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি সেই মহান ভাষা শহীদদের জন্য আমরা গর্ব করি। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের কলেজে শহীদ মিনার নেই। তাই অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও বিশেষ এই দিনে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারিনি। অতি দ্রুত কলেজে একটি শহীদ মিনার তৈরিতে সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এব্যাপারে স্থানীয়রা বলেন, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিগত ২৫ বছরে সুনামের সহিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এমনি ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে এ কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। তবে অত্যন্ত দুঃখের হলেও সত্য সনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটিতে শহীদ মিনার না থাকায় সেখানকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাসহ স্থানীয় জনসাধারণ ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনে বঞ্চিতই থেকে যান। তাই অচিরেই কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান তারা।
কলেজের প্রভাষক হাসান মাহমুদ রানা, মাসুদ ইসলাম, আসাদসহ কয়েকজন শিক্ষক জানান, সাতক্ষীরার প্রায় সকল কলেজে শহীদ মিনার থাকায় তারা শ্রদ্ধাভরে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি পালন করতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তাদের কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত ভাবে দিনটি পালন করতে পারেন না। সে কারণে দ্রুতই কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি বলেও মনে করেন তারা।
এব্যাপারে ঝাউডাঙ্গা কলেজ অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান বলেন, ১৯৯৭ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ২৫ বছরেও কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। একাধিকবার জনপ্রতিনিধিরাসহ সংশ্লিষ্ঠরা শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কার্যত তার বাস্তবায়ন হয়নি। ইতোমধ্যে জেলার যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেসকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরী করে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন হলে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।