বরাদ্দ নিয়েছে ৮ শ’ বর্গফুটের বাসা আর বাস করছেন ২৪ শ’ বর্গফুটের বাসায়। আবার সেই বাসার বিদ্যুৎ বিল বা পানির বিলও পরিশোধ করেন না তারা। ঝুকিপূর্ণ ও জড়াজীর্ণ ভবনেও কোন বরাদ্দ না নিয়ে বাস করছে বহিরাগতরা। অবৈধভাবে খেলার মাঠ দখল করে সবজির বাগান করেছে কয়েকজন কর্মচারী। একাধিকবার কমিটি করে পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত চিঠি চালাচলিতেই শেষ হয় কার্যক্রম। আর এই দখলদারদের বিরুদ্ধে হয়নি কোন অভিযান। ব্যবস্থা যারা নিবেন সেই অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের বাংলোতেও অবৈধভাবে থাকছেন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ভবনগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কলেজের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই এভাবে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে এরা।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজে কোয়াটার সন্ধ্যার পরে মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়। বহিরাগতরা প্রবেশ করে মাদক ক্রয় করছেন ও সেবন করছেন। গত সপ্তাহে খুলনা মেডিকেল কলেজের কোয়াটার থেকে গাঁজাসহ আব্দুল্লাহ নামে এক যুবককে আটক করেন পুলিশ। আটককৃত ওই ছেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ ক্লিনার সোবহানের ছেলে। সোবহানের স্ত্রী আকলিমাও করোনা হাসাপাতালে (আউট সোর্সিং) ক্লিনার পদে কর্মরত আছেন। কলেজের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসাবস করছে বহিরাগতরাও। এর আগে একটি মেয়েকে অপহরণ করে কোয়াটারে আটকে রাখার অভিযোগে দুলাল নামে এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। একই সাথে সেখান থেকে মাদক ও ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া কলেজের চতুর্থ শ্রেনীর স্টাফ জামাল-কামাল দুই ব্যক্তি কোয়ার্টারে মধ্যে ছেলে-মেয়েদের খেলার মাঠ দখল করে সেই জায়গাটা ঘেরাও করে সবজির বাগান গড়ে তুলেছেন। এতে কোমলমোতী ছেলে-মেয়েরা খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিভাবকরা এ বিষয়ে তাদেরকে কিছু বলতে গেলে স্থানীয় প্রভাব দেখান তারা। উল্টো শাঁসিয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া আছে। গত কয়েক বছর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আলমগীর অবসরে চলে গেলেও এখনো কলেজের কোয়াটারের ফ্লাটে তিনি অবৈধভাবে বসাসস করে আসছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের এমএলএস এরাশদ নিজের নামে কোয়ার্টার বরাদ্দ নেয়া থাকলেও সে সেখানে না থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সেলিনা আফরোজ থাকছেন। যা পুরোটাই অবৈধ। এতে সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছেন।
এদিকে কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে এলএএমএস, সুইপার কাওছার, টেবিল বয়, নিরাপত্তা কর্মী, সিকিউরিটি,ওয়ার্ড বয় প্রবীর, জিন্নাত, বাবুর্চি রিনা বেগম, গাড়ি চালক কামরুল, আঃ হাই, রিপন, দেলোয়ার, প্যাথলজি বিভাগসহ অনেকেই কলেজের আবাসিক ভবনের বাসা বরাদ্দ ছাড়াই বছরের পর বছর সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বসবাস করে আসছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী সরকারি বাসা বরাদ্দ নিলে তাকে মূল বেতনের ৪৫-৫০ শতাংশ সরকারকে বাড়ি ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আহাদ বলেন, খুমেক হাসপাতালের সাবেক হিসবারক্ষক আলমীগরকে বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে বকেয়া বিদুৎ বিলসহ অন্যান্য সবকিছু পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, কোয়াটারের মধ্যে বহিরাগতদের যাতায়াতের বিষয়ে তথ্য আমার কাছে এসেছে। এছাড়া যার নামে ফ্লাট বরাদ্দ নেওয়া সে না থেকে অন্যজন বসাবস করছেন এরকম কিছু তথ্য পেয়েছি। যার অবৈধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, যারা এরকম কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলিতে কেউ যাতে বসাবস করতে না পারে সে জন্য বিদ্যুৎ বিল, পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পরে তারা আবার গোপনে সংযোগ নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের খেলার মাঠ দখল করে কেউ যদি সবজি বাগান করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট / এমবিএইচ/এমএম