খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

করোনা মহামারিতেও জাপানের বাজার পেয়েছে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি

কাজী মোতাহার রহমান

করোনা মহামারির কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে খুলনাঞ্চলের হিমায়িত রপ্তানি কমে গেছে। দামও কমেছে পাউন্ড প্রতি ৫০ পেন করে। মার্চ-এপ্রিলে বড় ধাক্কা এলেও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুলনার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জাপানের বাজার পেয়েছে খুলনাঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ি। একইসাথে আরও ১৪টি দেশে কম-বেশি চিংড়ি রপ্তানি হচ্ছে। বৃহত্তর খুলনায় ৫৮টি হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মার্চ-এপ্রিলে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি বড় ধাক্কা খায়। চাষী, ফড়িয়া, আড়ৎদার ও রপ্তানিকারক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতি কেজি বাগদা চিংড়ি ৭শ’ টাকার পরিবর্তে খুলনাঞ্চলের চাষীরা ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি করে। তাতে বড় রকমের লোকসান হয়। এছাড়া ২০ মে আম্ফানের আঘাতে শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রার চিংড়ির ঘের ভেসে যায়। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সূত্র মতে, ১৪৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা মূল্যের চিংড়ি আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৪ হাজার ৬শ’ ৩৫টি চিংড়ির ঘের ভেসে যায়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চল থেকে চট্রগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে  মে মাসে ১ কোটি ৪ লাখ ডলার, জুন মাসে ১ কোটি ৭২ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ৯৩ লাখ ৩ হাজার ডলার, ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮শ’ ৩৭ ইউরো, আগস্ট মাসে ৭০ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, ৫ লাখ ২৫ হাজার ইউরো, সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার, ৪ লাখ ৩ হাজার ইউরো, অক্টোবর মাসে ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ডলার, ২ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’ ৪৯ ইউরো, নভেম্বর মাসে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ডলার ও ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬শ’ ৯৪ ইউরো মূল্যের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়। যেসব দেশে চিংড়ি রপ্তানি হয় তার মধ্যে জাপানই শীর্ষে। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানিকারক অন্যান্য দেশগুলো হচ্ছে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, রোমানিয়া, ইটালি, গ্রীস, সাইপ্রাস, সুইজারল্যান্ড ও চীন।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সর্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন অপর এক গণমাধ্যমকে বলেন, চিংড়ি দামি ও সৌখিন খাদ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে যে মন্দা ও অবরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই পণ্যের চাহিদা গেছে কমে। ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারাও গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত ২৯০টি ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন, যাতে ‘৪৬০ কোটি টাকা লোকসান হবে’ বলে ব্যবসায়ীরা হিসাব করে দেখেছেন।

সেন্ট মার্টিনস হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কমিশন ম্যানেজার প্রবীর চক্রবর্তী জানান, ইউরোপে খুলনাঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। জাপানে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে প্রতি মাসে খুলনাঞ্চল থেকে ২০ কন্টেইনার চিংড়ি রপ্তানি হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে ৫ কন্টেইনার । প্রতিটি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য কন্টেইনারের ধারণ ক্ষমতা ১৬ হাজার কেজি এবং ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনারে ধারণ ক্ষমতা ৯ হাজার কেজি। ইতিপূর্বে প্রতি পাউন্ড ৭ ডলার বিক্রি হলেও এখন ১ ডলার দাম কমেছে।

বাংলাদেশ শ্রিম্প এন্ড ফিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক তার এক প্রবন্ধে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষ সম্পর্কে উল্লেখ করেন, ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের বিলখুকশিয়া অঞ্চলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে হেক্টর প্রতি ৩শ ৩৪ কেজির পরিবর্তে ২ হাজার কেজি বছরে উৎপাদন হচ্ছে। উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য বিপিসি ও বিএসএফএফ ডুমুরিয়ার বান্দায় কয়েকটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অপর একটি সূত্র বলছে, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকরা প্রণোদনা পেয়েছেন।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, বর্তমানে বাজারে ২০ গ্রেডের চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় নেমেছে, যা আগে ৭০০ টাকা থেকে ৭৩০ টাকার মধ্যে ছিল। এসব চিংড়ি উৎপাদনে ৫০০ টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে জেলার ৬৯ হাজার চিংড়ি চাষী লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন কঠিনতম বছরের অর্থনীতি প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে প্রণোদনার প্যাকেজগুলো বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। যদিও বেশিরভাগ সুবিধা পেয়েছেন বড়-বড় শিল্প মালিকরা। তারপরও সেটা বেশ স্বস্তিদায়ক ছিল।

খুলনা গেজেট/কেএম

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!