খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২
কর্মচারীদের ছাটাই না করেই

করোনাকালে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ দেখালেন ব্যবসায়ী হাবিব আহসান

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

লকডাউনে সারাবিশ্ব যখন স্তব্ধ, মানুষ ঘরবন্দী মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বিপর্যস্ত জনজীবন। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত টানা লকডাউনে মানুষ হারাচ্ছে চাকরি, বন্ধ হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে মাসের পর মাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের নিয়ে গরুর খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাতক্ষীরা শহরের লেদার সামগ্রী ব্যবসায়ী মোঃ হাবিব আহসান।

সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল মোড়ে ব্যাগপ্যাক ও প্রেসিডেন্ট গ্যালারী নামে লেদার সামগ্রীর দুটি শোরুম রয়েছে তার। যেখানে উন্নত মানের হ্যান্ড ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, ভ্যানেটি ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, ট্রলি ব্যাগসহ নানা ধরনের লেদার সামগ্রী বিক্রি করা হয়। তিনি প্রায় ১০ বছর যাবত সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। ১৫ জন কর্মচারী দিয়ে তার শো-রুম দুটি ভালই চলছিলো। কিন্তু মহামারী করোনা ভাইরাস সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। করোনাকালে তার প্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা নেই বললেই চলে।

তাছাড়া স্থানীয়ভাবে ও সরকারিভাবে টানা লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দোকানের কর্মচারীদের বেতন না দিতে পেরে চিন্তায় পড়ে যান হাবিব হাসান। তখনই সিদ্ধান্ত নেন ৫ বছর আগে ফেলে আসা গরুর খামারটা আবার শুরু করা যায় কিনা। যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ। ম্যানেজারসহ দোকানের কর্মচারীদের সাথে নিয়ে শুরু করলেন গরুর খামার। শুরুতেই সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ৬টি গরু ক্রয় করে খামার শুরু করলেও এখন হাবিব আহসানের খামারের মূলধন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।

হাবিব আসান বলেন, ৫ বছর আগেই খামার তৈরি করে গরু পালন শুরু করি, কিন্তু তখন ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় দেশী গরুর দাম কমে যায়। ফলে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিলো। ভারতীয় গরুর আগ্রাসনে খামারটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। করোনা মহামারির কারণে লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের সাথে নিয়ে আবার খামারটি শুরু করেছি। দোকানের সব কর্মচারীই এখন খামারে কাজ করছে। গরুর গোসল করানো, খাওয়ানো, গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা সব কিছুই তারা করছে, আমি নিজেও করছি।

হাবিব আহসানের ম্যানেজার ইয়াসিন আরফাত বলেন, কোন কাজকে ছোট মনে করা উচিত নয়। আগে ম্যানেজারি করেছি এখন গোয়ালে কাজ করছি, গরুর খামারের সব কাজ শিখে গেছি। বসে থাকলে খারাপ লাগে। কিন্তু এখন কিছুতো করতে পারছি। তাছাড়া অনেক দোকানের কর্মচারীরা চাকরি হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আমাদের বস হাবিব আহসান দোকান বন্ধ থাকলেও খামার করে কিছু টাকা হলেও বেতন দিচ্ছে তাতে আমরা খুশি।

হাবিব আহসান আরো বলেন, তার খামারে সব দেশি গরু পালন করা হয়। কারণ সারা বছর দেশি গরুর চাহিদা থাকে এবং ভালো দামে বিক্রয় করা যায়। তার তিনটি খামারে এখন ৫০টি ষাড় রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন খামার ও হাট থেকে ক্রয় করে ২ থেকে ৩ মাস নিজস্ব জমিতে চাষকৃত ঘাষ কুড়া লতাপাতা ও দানাদার খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করে বিক্রয় করা হবে। আমার খামারে কোন প্রকার রাসায়নিক খাবার দিয়ে গরু মোটা তাজা করা হয়না। এতে করে গরু প্রতি ৫ হাজার থেকে ১৫ বা ২০ হাজারেরও বেশি লাভ করা সম্ভব। বুঝে শুনে গরুর খামার করতে পারলে বেশ লাভবান হওয়া সম্ভব। বিশেষ করে গরু ক্রয় করার সময় সুস্থ সবল গরু ক্রয় করতে হবে, তাহলে পালন করে ভালো লাভ করা সম্ভব। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে তিনি লাইফ ওয়েট মেশিন ক্রয় করেছেন যেন ক্রেতারা সহজে ওজন দেখে গরু ক্রয় করতে পারেন।

তিনি জানান, লকডাউনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। সরকারিভাবে কোন প্রণোদনা না পেলেও বসে থাকার পাত্র আমি নই। কর্মচারীদের সংসার চালিয়ে নেয়ার মত ব্যবস্থা করেছি। লকডাউন উঠে গেলে যদি শো-রুম দু’টি আবার চালু করতে পারি এখানের কর্মচারীরাই আবার দোকানে ফিরে যাবে। কিন্তু তাই বলে খামারটি বন্ধ করবো না।

হাবিব আহসানের খামার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশি গরুর একটি বিশাল খামার করতে চান, যেখানে গরুর সকল খাদ্য খামারেই উৎপাদিত হবে এবং অনেক বেকার ছেলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে হতাশ না হয়ে অন্যরাও আমার মত গরুর খামার করতে পারেন। কারণ এ অবস্থা থেকে শুধু আমরা নয়, সারা বিশ্বের মানুষ সহজে পরিত্রাণ পাবে বলে মনে হয় না। কাজেই বেঁচে থাকতে হলে প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিকল্প আয়ের উৎস বের করতে হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!