নানা আয়োজনে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কলেজে পুনর্মিলনী, শিক্ষক সম্মাননা ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ রবিবার সারাদিনই কলেজ ক্যাম্পাস ছিলো উৎসবমুখর পরিবেশ। এক দিনের এই মিলন মেলায় সকলেই ছিলেন আবেগ আপ্লুত।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। কলেজ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক এম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মো. রশীদুজ্জামান। এসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন, কলেজ অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল্যাহ বাহার, উপাধ্যক্ষ ত্রিদীপ মণ্ডল, সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল করিম খোকন, ডা. প্রভাত সরকার, ডা. খালিদ-উজ-জামান প্রমুখ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজ মাঠের এক কোণে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। তাঁদের কেউ সাংবাদিক, কেউ কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক, আবার কেউ–বা ব্যবসায়ী। আড্ডার অন্যতম বিষয় ছিল ফেলে আসার দিনের স্মৃতি রোমন্থন। আড্ডায় ফিরে আসে সেই কলেজজীবনের নানা গল্প-ঘটনা। ২৭ বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ও আবেগাপ্লুত ছিলেন কেউ কেউ।
আড্ডারত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য। তিনি ঢাকার ইংরেজি পত্রিকার পরিকল্পনা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর এবারই প্রথম কলেজে এসেছি। নতুন-পুরোনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। ২৭ বছর পর কলেজে এসে খুবই ভালো লাগছে। কলেজের অনেক পরিবর্তনও হয়েছে।’
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গাজী মোমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এক বন্ধু মারা যাওয়ার পর একবার এসেছিলাম। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এসেছি। ২৭ বছর পর অনেক বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়েছে। কলেজ আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। ২৭ বছরে একটি কলেজের যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, এখানে তা হয়নি।’
সাংবাদিক পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য ও শিক্ষক মোমিন উদ্দিনের মতো বিভিন্ন ব্যাচের শত শত নতুন-পুরোনো শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর ছিল কপিলমুনি কলেজ প্রাঙ্গণ। পুরোনো বন্ধুবান্ধবকে অনেক দিন পর সরাসরি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। ছবি, ভিডিও, সেলফি আর আড্ডায় মেতে ওঠেন তাঁরা। স্বল্প সময়ের জন্য ফিরে যান সেই কলেজজীবনে।
২০০১ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছিলেন তাপস সাধু। এখন এই কলেজেই শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তাপস সাধু বলেন, ‘কপিলমুনি কলেজটিতে একসময় পাইকগাছা উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতেন। অনেক শিক্ষার্থী এখন বড় বড় জায়গায় কাজ করছেন। নিজের বন্ধুদের পাশাপাশি এসব ছোট-বড় ভাইদের সংস্পর্শে আসতে পেরে ও তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
বাংলা নববর্ষ থাকায় অনুষ্ঠানে ছিল বর্ষবরণের ছাপ। নারী-পুরুষের সাজেও ছিল ভিন্নতা। বর্ষবরণের মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, খুরমাসহ নানা পদ রাখা হয়েছিল খাদ্যতালিকায়। দুপুরে খাবারের বিশেষ আয়োজন। বিকেলে কবিতা, গান ও নৃত্যানুষ্ঠান।
খুলনা গেজেট/কেডি