খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ডাকবাংলো থেকে রূপসা ঘাট : কেসিসি ও জেলা পরিষদের বিরোধ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডাকবাংলো মার্কেট নির্মাণ নিয়ে বিরোধে রেশ কাটতে না কাটতেই রূপসা খেয়া ঘাট ইজারা নিয়ে ফের বিরোধে জড়ালো খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ও খুলনা জেলা পরিষদ। কেসিসির নিয়ন্ত্রণে থাকা ঘাটটি ইজারা দিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দরপত্র প্রকাশ করেছে জেলা পরিষদ। এ ঘটনায় বিষ্মিত কেসিসি কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ।

শুধু প্রতিক্রিয়ািই সীমাবদ্ধ থাকেনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থা। গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাঠিয়ে এই তৎপরতাকে ‘আপত্তিকর ও নিন্দনীয়’ বলে মন্তব্য করেছে। সরকারের অন্য একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এমন বিবৃতি নজিরবিহীন বলছেন বিশিষ্টজনরা। তারা জেলা পরিষদের অতি উৎসাহী মনোভাব থেকে নিবৃত হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে সংস্থাটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় কেসিসি। কেসিসির অভিযোগ ছিলো কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে কেসিসির জমিতে মার্কেট নির্মাণ করছে জেলা পরিষদ। দুই পক্ষের যৌথ জরিপে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া জেলা পরিষদ পিছু হটে। াপরে দুই পক্ষ কয়েক দফা বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে দুই সংস্থার মধ্যে ফের টানাপোড়েন শুরু হলো।

সূত্রটি জানায়, খুলনার সব খেয়াঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আয় রূপসা খেয়া ঘাট থেকে। ঘাটটি বর্তমানে কেসিসি পরিচালনা করছে। সর্বশেষ অর্থ বছরে ঘাট থেকে কেসিসি রাজস্ব আয় হয়েছিলো ৬৫ লাখ টাকা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি নিজেদের মালিকানাধীন ১৬টি ঘাট ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা পরিষদ। সোমবার বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন দৈনিক প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তির ১৫ নম্বর রূপসা খেয়া ঘাট ইজারার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। জেলা পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে ঘাটের ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ৭৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

কেসিসির বৈষয়িক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, রূপসা ঘাটে ফেরী চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ২০০৫ সালের ১২ জুন সড়ক ও জনপথ বিভাগ রূপসা ঘাটটি কেসিসি’র কাছে হস্তান্তর করে। সেই থেকে কেসিসি ঘাটটি পরিচালনার পাশাপাশি উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। ২০১৩-১৪ সালে প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ করে ঘাটের দুই পাশে টার্মিনাল জেটিসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়ন করা হয়। প্রতিবছরই উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। হঠাৎ করে জেলা পরিষদের ‘খেয়াঘাট ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি’তে রূপসা খেয়া ঘাটের নাম দেখে সবাই অবাক।

সূত্রটি জানায়, বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমানকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে দুই পক্ষ কাগজপত্র নিয়ে বসলে বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।

পরে বিকালে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় কেসিসি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রূপসা খেয়াঘাটের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা আপত্তিকর ও নিন্দনীয়। দরপত্রের ১৫নং ক্রমিকে উল্লিখিত ‘রূপসা খেয়াঘাট’-এর বিপরীতে কোন প্রকার দরপত্র দাখিল/অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য কেসিসি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।’

এ বিষয়ে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ১৮৮৫ সালে জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। রূপসাসহ সব ঘাটের মালিকানা জেলা পরিষদের ছিলো। ১৯৬৮ সােেলর ১২ জানুয়ারি মৌলিক গণতন্ত্র ও স্থানীয় সরকার বিভাগের এক নির্দেশে রূপসা ফেরীঘাটসহ ৫টি ঘাট তৎকালীন আইডব্লিউটিএর নিকট শর্ত সাপেক্ষে হস্তান্তর করে। কিন্তু ঘাটটি পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় জেলা পরিষদ ঘাটটি ফেরত চায়। এনিয়ে ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত চিঠি চালাচালি ও আদালতে মামলা চলে। ২০০৫ সালে ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে জেলা পরিষদ খেয়া ঘাট ইজারার দরপত্র আহ্বান করে। তখন কেসিসি কর্তৃপক্ষ খুলনার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করে। রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এই মামলার পক্ষভুক্ত হয়। কয়েক বছর পর সবপক্ষের সম্মতিতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। এতে ঘাটের প্রকৃত মালিকানা জেলা পরিষদ ফিরে পেয়েছে। এজন্য এবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

তবে কেসিসির বৈষয়িক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হস্তান্তরিত ঘাট পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী কেসিসি ও রূপসা উপজেলা পরিষদ ঘাট পরিচালনা করবে এমন সিদ্ধান্তে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। সেই থেকে ঘাট পরিচালনা করছে কেসিসি, অর্ধেক রাজস্ব পাচ্ছে রূপসা উপজেলা পরিষদ। এখানে জেলা পরিষদের ভূমিকা নেই। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইজারার দরপত্র প্রকাশ করেছে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!