প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতি দেশ। প্রতি বছর লাখ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক ভিসা নিয়ে ভারতে যায়। কেউ যায় আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে, কেউ যায় চিকিৎসা করতে আবাার কেউ যায় ব্যবসায়ীক কাজে। গেল ২০২২ সালে ১০ লাখের অধিক বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা প্রদান করেছে। এর মধ্যে শুধু বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে গেছেন ৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক।
২০২০-২১ সালে করোনা ভাইরাসের কারণে দু-দেশে লক ডাউন থাকায় ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সাধারণ মানুষের যাতায়াত কম হলেও ২০২২ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দুতাবাস থেকে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশী ভারতীয় ভিসা প্রদান করেছে। এ সময়ে ১০ লাখের অধিক বাংলাদেশী নাগরিককে ভিসা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ভিসা পাওয়া এসব বাংলাদেশী নাগরিকদের অধিকাংশই বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে ভ্রমণ করেছেন। তবে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল সংকটের কারনে যাত্রী হয়রানীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, বেনাপোল একটি আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট। এ চেকপোষ্ট দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের যাত্রী সহ হাজার হাজার বাংলাদেশী ও ভারতীয় যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। করোনার ভাইরাসের কারণে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে কয়েকটি চেকপোষ্ট বন্ধ থাকায় চেনাপোল চেকেপোষ্ট দিয়ে যাতায়াতের পরিমাণ এখন অনেক বেশী। ২০২২ সালে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮১ জন নাগরিক ভরতে গেছেন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশী ও ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৭ জন ভারতীয় নাগরিক রয়েছে। আর একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ১১০ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৭২২ জন বাংলাদেশী নাগরিক দেশে ফিরেছেন এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৮ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। ভারতীয় ভিসা পাওয়ায় একদিকে সাধারণ মানুষ যেমন ভারতে চিকিৎসা সেবা সহ অন্যান্য কাজ করতে পেরেছেন অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী নাগরিকদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে ভারত সরকার বাংলাদেশে ১৫ টি ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র চালু করেছেন। এসব ভিসা কেন্দ্রগুলি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এদেশে ভারতীয় ভিসা পরিসেবা সমূহ হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা অপারেশন নেটওয়ার্ক। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভারতীয় ভিসা বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রদান করা হয়ে থাকে। নাগরিকগণ পায়ে হেঁটে, বাসে, অভ্যন্তরীণ নৌপথে, সমুদ্রপথে, রেলপথে স্থলসীমান্ত অতিক্রম করে ও আকাশপথে ভারতে যান। ভারতে ভিসা-ভিত্তিক ভ্রমণের এত বৈচিত্র্যময় মাধ্যম অন্য কোনো দেশের নেই।
কোভিড-১৯ অতিমারির আগে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশী নাগরিকদের ১৬ লাখেরও বেশি ভিসা প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে, লক-ডাউন সত্ত্বেও, বাংলাদেশে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি ভিসা ইস্যু করা হয়। এর মাঝে মেডিকেল ভিসা ছিল সর্বাধিক। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯৬হাজার মেডিকেল ভিসা ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়ায় এমনটা ঘটেছিল।
২০২২ সালের মার্চের শেষ থেকে স্থল বন্দর ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ (কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট) শিথিল করার কারণে ভ্রমণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রাক-অতিমারি পর্যায়ে পৌঁছাতে শুরু করেছে। যার মাঝে ট্যুরিস্ট ভিসাও রয়েছে। বাংলাদেশে আমাদের মিশন/পোস্টসমূহ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। যার মধ্যে ২ লাখ ৭৩ হাজার মেডিকেল ভিসা রয়েছে। সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের বিনামূল্যে ভিসা প্রদান করা হয়। তবে, জমাদানের জন্য আইভ্যাক প্রতি ভিসা আবেদনে ৮০০ টাকা প্রসেসিং ফি নিয়ে থাকে।
ভারত ও বাংলাদেশের ভিসা ব্যবস্থাকে সার্বজনীন করতে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সংশোধিত ভ্রমণ চুক্তি ২০০১ সালের মে মাস থেকে চালু হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সংশোধন করা হয়।
খুলনা গেজেট/ এসজেড