যশোরের প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যার ২১ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বিচার কার্য শেষ হয়নি। আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে এ মামলার গোটা বিচার প্রক্রিয়া। হত্যার বিচার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবারসহ যশোরের সাংবাদিকরা। শুক্রবার প্রথিতযশা এ সাংবাদিকের ২১তম হত্যাবার্ষিকী।
সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) নেতৃবৃন্দ। করোনা পরিস্থিতিতে শুক্রবার তার মৃত্যুবার্ষিকীতে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি ও শহীদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া।
২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল শহরের ব্যস্ততম দড়াটানা বটতলা এলাকায় নিজ অফিসে নৃশংসভাবে খুন হন। এ মামলায় ২০০১ সালে সিআইডি ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়। সেই সময় মামলার বর্ধিত তদন্তে সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।
একইসাথে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামি ঘনিষ্টজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। এরপর বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি স্থানান্তর করা হয় খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে। এ অবস্থায় মামলার বাদী শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।
আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ মামলার অন্যান্য আসামিদের সাথে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। এ কারণে তার পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এ আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্যে সরকারের প্রতি রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলার বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় এ পর্যন্ত মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর ইদ্রিস আলী জানিয়েছেন, আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।
উল্লেখ্য, এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু স্ট্রোকে এবং যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি