খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরের ভাংনাহাটিতে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
  নরসিংদীতে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় যুবককে গুলি করে হত্যা

উপসর্গহীন করোনা সংক্রমণ কতটা ক্ষতিকর

ডা. হিমেল ঘোষ

প্রায় সমস্ত বছরটা জুড়েই করোনা মহামারী নাভিশ্বাস ফেলছে পুরো পৃথিবীতে। বাংলাদেশেও প্রায় ৬ মাস যাবত করোনা ভাইরাস তার তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে আমাদের সামনে উঠে আসছে এই ভাইরাসের নতুন নতুন বিভিন্ন তথ্য। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি বড় অংশই উপসর্গহীন। অর্থাৎ তাঁরা করোনা সংক্রমিত কিন্তু তাঁদের জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি না-ও থাকতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার সামান্য খারাপ লাগা, শরীর ম্যাজম্যাজ বা দুর্বলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে উপসর্গ। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পরও যাঁদের তেমন উপসর্গ থাকে না, তাঁদের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না তা নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা।

শুরুতে মনে করা হয়েছিলো যে, উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীর মাধ্যমেই ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। আসলে উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, করোনা সংক্রমিত যেকোনো রোগীর মাধ্যমেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু উপসর্গ না থাকার দরুণ কোনো কোনো রোগী নিজের অজান্তেই কোনো ধরণের সতর্কতা অবলম্বন না করে কর্মস্থলে যাওয়া, বাড়ির বাইরে যাওয়া কিংবা অন্যদের সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা অব্যাহত রাখেন। এ কারণে উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের তুলনায় উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি।

এছাড়া করোনা রোগী উপসর্গহীন হলেও হঠাৎ রক্তে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। একে হ্যাপি হাইপক্সিয়া বলে। এ ক্ষেত্রে রোগী নিজেও টের পান না যে তাঁর শরীরে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন। কাজেই উপসর্গহীন রোগীদেরও পালস অক্সিমিটারের মাধ্যমে নিয়মিত রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করে দেখতে হবে। উপসর্গ না থাকলেও কোনো পরিশ্রমের কাজ না করাই শ্রেয়। বিশ্রাম নিন এবং প্রচুর পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান। কমলা, পেয়ারা, আমলকির মত টক জাতীয় ফল এবং দুধ, কলিজা, ডিম ইত্যাদি নিয়মিত আহার করুন।
রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ দ্রুত কমতে থাকা, হঠাৎ বমি, পাতলা পায়খানা, বুকব্যথা, পেটব্যথা, অতিরিক্ত দুর্বলতা, খিঁচুনি ইত্যাদি দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। বেশির ভাগ মৃদু উপসর্গের ও উপসর্গহীন রোগীর তেমন কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। যাঁদের বয়স বেশি এবং ডায়াবেটিস কিংবা হৃদ্‌রোগ অথবা উভয়ই আছে, যাঁরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষধ সেবন করেন, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা করে ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সামান্য অবহেলা করলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।

উপসর্গবিহীন করোনা যতটা না নিজের জন্য ক্ষতিকর, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর নিজের প্রিয়জন, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কিংবা বয়স্ক মানুষের জন্য। এজন্য পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণের উপস্থিতি ধরা পড়লে কিন্তু কোনো উপসর্গ বিদ্যমান না থাকলেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। প্রিয়জনদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।

এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস(স্বাস্থ্য),
মেডিকেল অফিসার,
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!