তরমুজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু জুলাই, আগস্টেও খুলনার কৃষকের ক্ষেতে তরমুজের দেখা মিলছে। ঘেরের পাড়ে নেটের ব্যাগে ঝুলছে এক একটা রসালো তরমুজ। অসময়ের এই তরমুজ চাষ হচ্ছে জেলার কয়রা, রূপসা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ক্রমাগত উপকূলীয় এ এলাকার কৃষকদের মধ্যে অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি দপ্তর ও সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ এ অঞ্চালের কৃষকদের বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছে। লবন সহিঞ্চু হওয়ায় তরমুজ চাষ উপকূলের কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে বলে অভিজ্ঞ মহলের দাবি।
সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা যায, উফসি জাতের বারি-১ ও বারি-২ জাতের তরমুজ বারো মাস চাষাবাদ করা যায়। এটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় ফসল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এক বছর পূর্বে এই উফসি জাত দুটি আবিষ্কার করে। এটি উফসি জাত হওয়ায় চাষিরা উৎপাদিত ফল থেকে বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে। অসময়ে তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কয়রা ও ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকজন প্রগতিশীল চাষিকে উন্নত উফসি জাতের বীজ, সার ও পরামর্শ দেয়া হয়। তারা ঘেরের রাস্তায় মাঁচা তৈরি করে চাষাবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে কেউ কেউ বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন।
কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের প্রভাষক শাহাবাজ আলী জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে অসময়ে তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাঁচায় তরমুজ চাষের জন্য নিজ ভিটায় ৪০ শতাংশ জমিতে পরিক্ষামূলক চাষ করেন। জুনের প্রথমেই পরিক্ষামূলকভাবে ৩শ’ মাদায় বারি-১ জাতের ৬০০ তরমুজ বীজ রোপন করেন এবং রোপনের ৮০ দিন পর থেকে ফল উত্তোলন করেছেন। অত্যান্ত সুস্বাদু অসময়ের এই তরমুজ বাজারে ব্যাপকহারে চাহিদা থাকায় ভাল দাম পাচ্ছেন তিনি। তরমুজের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি তরমুজ গড় ৬ থেকে ৮ কেজি ওজন হয়েছে এবং প্রতি কেজি পাইকারি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঁচায় অসময়ে ব্যাপকভাবে তরমুজ ঝুলছে। এজন্য গ্রামের মানুষ দেখতে ভিড় জমাচ্ছে তার বাড়ীতে। তার এই তরমুজ চাষের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কয়রা সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ।
এর আগে ২০২০ সালে রূপসা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে অফসিজনে তরমুজের আবাদ হয়। মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের ৪শ’ তরমুজ চারা লাগিয়ে প্রায় ১২শ’/১৫শ’ পিচ তরমুজ পাওয়া যায়। ২০২১ সালে রূপসার নতুনদিয়া, শিয়ালী, গোয়াড়া, সামন্তসেনা, পাথরঘাটা, তিলক, জাবুসা, বাধাল ও ভবানীপুর গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ইয়োলো হানি, ইয়োলো ড্রাগন, সুইট ক্রাঞ্চ, কারিশমা এসব হাইব্রিড জাতের অমৌসুমের তরমুজ চাষ করে কৃষক লাভবান হয়। চলতি বছরেও রূপসা উপজেলার ৫০ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের অসময়ের তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে বলে রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান। তিনি আরও জানান, এ বছর একশ’ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত হাইব্রিড বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, খুলনার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনর রশিদ বলেন, দেশে যে তরমুজ চাষ হয় তার অধিকাংশই হাইব্রিড। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট দুটি জাত আবিষ্কার করেছেন। বারি-১ ও বারি-২। এটি হাইব্রিড না হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ খেয়ে নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে এবং সারা বছর চাষাবাদ করতে পারবে। এটি বড় ধরণের সাফল্য। দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরের পাড়ে তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা আশাবাদি উপকূলীয় লবনাক্ত এলাকায় কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই