উন্নয়নের নামে দেশের প্রথম অঙ্কন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নষ্ট করা যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যেমে হলেও এটিকে রক্ষা করবে খুলনাবাসী। সংস্কারের অঙ্গিকার ও কমিটি করে তা ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র কোনভাবে মানা হবে না। কার স্বার্থে এগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে শত বছরের ঐতিহ্য পৌরভবন, ডাকবাংলো ভবন, পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয় হারিয়েছি। হারাতে বসেছি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সার্কিট হাউজের নির্যাতন কেন্দ্র, শতবর্ষী নাট্য নিকেতনটি সম্মুখে করনেশন হল ও বাংলাদেশের শিল্পকলার পথিকৃৎ শশীভূষণ পাল কর্তৃক ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম অঙ্কন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রিয় মানুষেরা কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারে না। আমারা চাই এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক হোক। তাই আমরা চাই ইতিহাস সমৃদ্ধ এই ভবনটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষণ করা হোক। এভাবে বললেন জনউদ্যোগ, গুণীজন স্মৃতি পরিষদের ও চারুশিল্পী সংসদের মানববন্ধনে বক্তারা।
শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা ১১টায় জনউদ্যোগ, গুণীজন স্মৃতি পরিষদ ও চারুশিল্পী সংসদের উদ্যোগে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে দেশের প্রথম অঙ্কনশিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট’ ভবন ও শিল্পী শশীভূষণ পালের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতিত্ব করেন নাগরিক নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আফম মহসীন ও সঞ্চালনা করেন কালের কন্ঠের ব্যুরো প্রধান লেখক সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাবেক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এ্যাড. মিনা মিজানুর রহমান, সিপিবির মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সভাপতি মফিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন দিলু, আওয়ামী লীগ নেতা বীরেন্দ্র নাথ ঘোষ, পোল্ট্রি ফিস ফিড দোকান শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এসএম সোহরাব হোসেন, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের কো-চেয়ারপার্সন ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটের নেতা মহানগর পূজা উদযাপন পরিশদের কোষাধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, খুলনা আর্ট স্কুলের পরিচালক বিধান চন্দ্র রায়, চারুশিল্পী সংসদের প্রশান্ত দাস, ছায়াবৃক্ষের মাবুবব আলম বাদশা, সাংবাদিক এম সাইফুল ইসলাম, বাসদের আ: করিম, উদ্যামীর নূরুন্নাহার লিলি, ছাত্র ইউনিয়নের মহানগর সভাপতি অর্চিষ্মান দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয় বৈদ্য, এ্যাড. আফম মুক্তাকুজ্জামান মুক্তা, এম এ সাদী, ইন্দ্রনীল দেবনাথ, অপরাজিতা যুব কল্যাণ সংস্থার পিকু কুমার বাছাড়, তুষার কুমার সরদার প্রমুখ।
স্বাগত বক্তৃতা করেন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৭৪ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ও কবি জসিমউদ্দীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশের প্রথম অঙ্কনশিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেন। শিল্পী এস এম সুলতান নানা সময়ে এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। শিল্পপ্রেমী শশীভূষণ পাল আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার পর ১৯২০ সালে বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদ মহারাজ বাহাদুর এ স্কুল পরিদর্শনে করেছেন। তিনি স্কুলটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
১৯২২ সালের জুলাই মাসে এ স্কুল পরিদর্শনে আসেন তদানীন্তন বাংলার গভর্নর লর্ড লিটন। স্কুল দেখে তিনি খুব খুশি হন। গভর্নর লর্ড লিটন পরে লর্ড রোনাল্ড সে’ও খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন স্কুলটি পরিদর্শন করার জন্য। অযত্ন-অবহেলায় আজও যা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সভায় ২৩ আগস্ট বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর জেলা প্রশাসককের নিকট স্মারকলিপি পেশ করবে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস