সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের পর খুলনায় এটাই তাঁর প্রথম সাংগঠনিক সফর। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি খুলনার দিঘলিয়ায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসেছিলেন, তবে সেটা ছিলো ব্যক্তিগত সফর। সোমবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ২ টায় তিনি সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। একই দিন সভামঞ্চ থেকে তিনি খুলনার ২২ টি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে প্রকল্পগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। উদ্বোধনের তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে ২২ টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর ২ টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। উদ্বোধনের তালিকায় সম্পন্নকৃত প্রকল্পের ২২ টি’র মধ্যে একটি হলো খুলনার শিরোমনি কেডি এ শিল্প এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) খুলনা কেন্দ্রে ১০ তলা বিশিষ্ট নারী হোস্টেল ভবন।
খুলনা বিটাকের অতিঃ পরিচালক এম মোর্শেদ আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নারী প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট হোস্টেল ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। যেটি আগামী ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। উদ্বোধনের নামফলক তৈরিসহ আনুষঙ্গিক সকল কাজ ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে ।
জানা যায়, খুলনা যশোর মহাসড়ক হতে কেবল শিল্প লিমিটেড সড়ক বরাবর ৫৫০ মিটার পূর্বে শিরোমনি কেডিএ শিল্প এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)’র খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্র। কেন্দ্রটির দক্ষিণ পশ্চিম সীমানা বরাবর আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নারী প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসনের জন্য নির্মিত হয়েছে ১০ তলা নারী হোস্টেল ভবন। ২০১৮ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়া কেন্দ্রে নারী হোস্টেল স্থাপন(২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় বিটাক খুলনা কেন্দ্রে ১০ তলা ভিতসহ ১০ তলা বিশিষ্ট নারী হোস্টেল ভবন নির্মাণ করে। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) প্রকল্পটির উদ্যোগ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
২০২০ সালের ১ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুল হালিম খুলনা বিটাক কেন্দ্রে ১০ তলা বিশিষ্ট এ নারী হোস্টেল ভবনের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবনটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৬০ টাকা। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে স্থাপত্য ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। মার্ক বিল্ডার্স লিমিটেড এন্ড মেসার্স শফিক ট্রেডার্স (জয়েন্ট ভেঞ্চার) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ কাজ করেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০ তলা বিশিষ্ট নারী হোস্টেল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও কর্মবাজারে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ। বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) কর্তৃক নারী হোস্টেল স্থাপন (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভবনটি নির্মিত হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় এ জাতীয় আরো ২ টি নারী হোস্টেল চট্টগ্রাম এবং বগুড়ায় নির্মিত হয়েছে।
নারী হোস্টেল ভবনটির উপরে উঠার জন্য ২ টি সিঁড়ি ও ২ টি লিফট রয়েছে। আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত সুদৃশ্য ভবনটির নীচ তলায় তৈরি করা হয়েছে রিসিপশন, অফিস রুম, স্টাডি রুম ডাইনিং ও গেস্ট রুম। ভবনটির নীচ তলার মোট আয়তন ৬৫০ দশমিক ৩২ বর্গমিটার। ২য় তলায় নির্মাণ করা হয়েছে কনফারেন্স রুম, কমনরুম, ক্লাসরুম ও টিচার্স রুম। আয়তন মোট ৫৮৫ দশমিক ২৮ বর্গমিটার। তৃতীয় তলায় নির্মাণ করা হয়েছে কমন রুম, প্লেয়ার রুম ও বেড রুম। আয়তন মোট ৬৫০ দশমিক ৪২ বর্গমিটার। চতুর্থ তলায় নির্মাণ করা হয়েছে বেডরুম ও করিডোর। আয়তন ৫০১ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার। পঞ্চম থেকে নবম তলায় তৈরি করা হয়েছে শুধু বেডরুম ও করিডোর।
সম্পন্নকৃত খুলনা বিটাকের ১০ তলা নারী হোস্টেল ভবনটিতে ২৮৪ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উক্ত ভবনের হোস্টেলে এ সকল নারী প্রশিক্ষণার্থী অবস্থান করে বিটাকের খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে ৯ টি ট্রেডে হাতে-কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়াও উৎপাদনমুখী ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দক্ষ নারী কারিগরি জনবল সরবরাহ সম্ভব হবে। এবং শিল্পসমূহ আরো অধিক হারে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নারী জনবল উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও দেশে এবং দেশের বাইরে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনে ব্যাপক সফলতা অর্জনে সহায়ক হবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) ক্রমবর্ধমান বিশ্বায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে উন্নততর প্রযুক্তিতে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন জনবল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের শিল্প খাতের সম্প্রসারণ এবং নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনে সহযোগিতা করাই বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)’র মূল দায়িত্ব।