খুলনার মডার্ণ সী ফুডের সাবেক কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার সাহা হত্যা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির এক ডিরেক্টর সহ ৮ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশীট দিয়েছে পিবিআই।
গত ২ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম খুলনা সিএমএম ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল ক এর আদালতে ওই চার্জশীট দাখিল করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ভিকটিম উজ্জ্বল কুমার সাহা মডার্ণ সী ফুডের ফিন্যান্স শাখায় কর্মরত ছিলেন। চাকরীর সুবাদে ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের পিতা ও স্ত্রীর সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে তিনি ডিরেক্টর মেহেদী হাসান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে সরবরাহ করতেন। এক পর্যায়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরী চলে যায় উজ্জ্বল কুমার সাহার।
এরপরও ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিং বিভিন্ন বিষয়ে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে সন্দেহ করতেন। এক পর্যায়ে মেহেদী হাসান তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ জুন সকাল পৌনে ১০ টায় পূর্ব পরিচিত সন্ত্রাসী দিয়ে ভিকটিমের মেয়ের স্কুলে সামনে তার উপর হামলা চালানো হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় উজ্জল কুমারকে প্রথমে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের ছোট ভাই সুমন কুমার সাহা বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এস আই মোঃ সোহেল রানা মডার্ণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিং সহ সকল আসামিকে আটক করেন। এর মধ্যে আসামি মামুনকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সহ সকল আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এ মামলা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টারলিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনের নাম বাদ রেখে ৮ জনের নামে তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশক্রমে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহাজাহানের ওপর ন্যাস্ত করা হয়। তদন্ত শেষে একই বছরের ১২ অক্টোবর প্রধান আসামি মেহেদী হাসান স্টারলিং ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর খুলনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের আদেশ নং ৪২ মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার পিবিআই হেডকোয়ার্টারের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলামের ওপর ন্যাস্ত হয়। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি মামলার কেস স্টোরি স্ট্যাডি করেন। সেখানে তিনি দেখেন যে, মর্ডাণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা পরিবারকে বলার কারণে উজ্জ্বল কুমার সাহাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাে করা হয়।
ঘটনার দিন সকালে ভিকটিম উজ্জল কুমার মেয়েকে নিয়ে জোহরা খাতুন বিদ্যানিকেতনে যান। রংধনু ক্লিনিকের সামনে মোটর সাইকেল রাখা স্থানে পৌঁছামাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগে সস্ত্রাসীরা তার ওপর আক্রমণ চালায়। হামলাকারীরা এ সময় ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প ও ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর হয়।
মূল পরিকল্পনাকরী মেহেদী হাসান স্টারলিংকে কিভাবে এ মামলার দায় থেকে পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তারা বাদ দিলেন তা তার বোধগম্য নয় বলে সম্পূরক চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে।
পিবিআই কর্তক দাখিলকৃত সম্পূরক চার্জশীটে আসামি করা হয়েছে মর্ডাণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিং, মোঃ আরিফুল হক সজল, মোঃ ডালিম শিকদার ওরফে আমির শিকদার ওরফে ডাললিম, সজল মোল্লা, কাউসার আলী, জাহিদ হাসান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন, মোঃ হাসিবুজ্জামান রনি ওরফে রনি হাওলাদার ও সজল গাজীকে। হত্যা পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান স্টারলিংয়ের বন্ধু মেহেদী হাসান মামুনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে চার্জশীটে।
মামলার বাদী সুমন কুমার সাহা পিন্টু জানান, মূল পরিকল্পনাকারীকে দুইবার চার্জশীট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবার যেন তিনি রেহাই না পান সেদিকে খেয়াল করতে হবে। তিনি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
খুলনা গেজেট/এএ