খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

ঈদ উপলক্ষে সাতক্ষীরার ২ লক্ষ ৮৭ হাজার পরিবার পাচ্ছে ভিজিএফ’র চাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলায় দুই লক্ষ ৮৭ হাজার ৩৪০টি দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) প্রোগ্রাম এর আওতায় প্রতি পরিবারকে দেওয়া হবে ১০ কেজি করে চাল। চাল বিতরণ কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে, শেষ হবে ঈদের আগেই। গত ঈদুল ফিতরে চালের পরিবর্তে সমসংখ্যক পরিবারকে ৪৫০ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছিল।

বিগত ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, সাতক্ষীরা জেলায় মোট পরিবারের সংখ্যা তিন লক্ষ ৬২ হাজার ৫৮৯ টি। এর থেকে দুই লক্ষ ৮৭ হাজার ৩৪০ দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। জেলায় দারিদ্রের হার দেখানো হয়েছে ২৫.১%। এর মধ্যে অতি দরিদ্রের হার ১২.৫%। সে হিসেবে জেলা দরিদ্র পরিবার ভিজিএফ পাওয়ার পর মধ্যবিত্ত পবিবারও এই কর্মসূচির আওতাভূক্ত থাকবে। এমন কি শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কোন পরিবারেই এই কর্মসূচি থেকে বাদ যাওয়ার কথা না।

এদিকে, বিভিন্ন ইউনিয়নে এই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ইউনিয়নে সঠিক মাপে চাল না দিয়ে প্লাস্টিকের বালতি মেপে দেওয়া হচ্ছে। এতে ৮ কেজি থেকে সাড়ে ৯ কেজির বেশী চাল পাচ্ছে না কার্ড ধারীরা। আবার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার অনেক পরিবার আম্পান, বুলবুল, ফনী, ও ইয়াস ঝড়ের কারণে বাড়িঘর হারিয়ে জীবন বাঁচাতে সাতক্ষীরা শহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। তারা পৌর এলাকার ভোটার না হওয়ায় পাচ্ছে না ভিজিএফ সহায়তা। নিজ এলাকায় ভিজিএফের তালিকায় নাম থাকলেও আনতে পারেছেনা। এদের খুঁজে বের করে এ সুবিধার আওতাভূক্ত করা জরুরী বলে মনে করেন সাতক্ষীরা জেলার নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) জানান, জেলার ৭টি উপজেলায় ৭৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় দুই লক্ষ ৮৭ হাজার ৩৪০ দুস্থ পরিবারকে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল দেওয়া হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ৭৬৬টি পরিবার, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৫৭৪টি পরিবার, তালায় ১৫হাজার ৮৬৫টি পরিবার, আশাশুনিতে ৫৯ হাজার ৫৫৮টি পরিবার, দেবহাটায় ২০ হাজার ৬৭৮টি পরিবার, কালিগঞ্জে ৬৬ হাজার ২২০টি পরিবার এবং শ্যামনগরে ৭৯ হাজার ৯৭৭টি পরিবারকে ভিজিএফের চাল দেওয়া হবে। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভায় চার হাজার ৬২১টি এবং কলারোয়া পৌরসভায় তিন হাজার ৮১ পরিবারকে ভিজিএফের চাল দেওয়া হবে।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, শ্যামনগর উপজেলায় মোট পরিবার রয়েছে ৮২ হাজার। ঈদে ভিজিএফ সহায়তা পাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার পরিবার। বাকি থাকবে মাত্র দুই হাজার পরিবার। করোনার কারণে ইতিমধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় ২৩ টন চাল ও ১৬ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ভিজিএফ শুরুর আগে এই টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়। ভিজিএফ শুরু হওয়ার পর বর্তমান এ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঈদের পরে এ কার্যক্রম ফের চালু করা হবে। এছাড়াও ৩৩৩ নাম্বারে কল পেয়ে ৬০ থেকে ৬৫ টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে খাদ্য সামগ্রী। যারা করোনাসহ অন্যান্য সহায়তা পেয়েছে তাদেরকে ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হয় না।

সাতক্ষীরা জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক (ভাঃপ্রাঃ) মোঃ বছির উদ্দিন জানান, ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে জেলায় মোট পরিবারের রয়েছে তিন লক্ষ ৬২ হাজার ৫৮৯ টি। এ জেলায় দারিদ্রের হার ২৫.১%। এর মধ্যে অতি দরিদ্র ১২.৫%। ২০১১ সালের আদম শুমারীর রিপোর্ট অনুযায়ী সারাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সেখানে খুলনা বিভাগে শুন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং সাতক্ষীরা জেলায় শুন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। এর ১০ বছর পূর্বে ২০০১ সালে যা ছিল ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ইতিমধ্যে আইলা, আম্পান, ইয়াসসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়, নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন এবং জলাবদ্ধতার কারনে এই জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্যত্রে চলে গেছে। ফলে বর্তমান সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে কমে যাওয়ারই আশংকা করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরকি কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম বলেন, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার অনেক দরিদ্র পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এলাকা ছেড়ে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করছে। তারা গ্রামের কার্ডধারী হওয়ায় পৌর এলাকা থেকে ভিজিএফ সুবিধা পাচ্ছে না। আবার নিজ এলাকা থেকেও ভিজিএফের চাল উত্তোলন করতে পারছে না। এদেরকে খুজে বের করে ভিজিএফের চাল পৌঁছে দেওয়া উচিৎ।

স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মোঃ তানজিল্লুর রহমান বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলায় দুই লক্ষ ৮৭ হাজার তিনশত ৪০ দুস্থ পরিবারকে ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল প্রকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কোন প্রকার অনিয়ম পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!