খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২

ইয়াস : প্রতাপনগরে নৌকাই একমাত্র ভরসা

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ফের আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ইয়াস আঘাতের দেড়মাস পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আজও দুর্ভোগ কাটেনি সাতক্ষীরার আশাশুনির উপজেলার প্রতাপনগরের মানুষের। পানিতে ভাসছে ২৫ হাজারের অধিক মানুষ।

এখনো পানিমগ্ন থাকায় ইউনিয়নের মানুষদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে হলে নৌকা কিম্বা ভেলায় চড়ে যেতে হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি থাকায় সেখানেও যেতে হয় নৌকায়। বাজার করতে ও জরুরী প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হলে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। অন্যসব এলাকার বেড়িবাঁধ বাঁধা সম্ভব হলেও প্রতাপনগরের বেড়িবাঁধের দু’টি পয়েন্ট আজও অরক্ষিত। আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে প্রতাপনগর ইউনিয়নে যাওয়া-আসার প্রধান সড়কে ক্লোজার উঠার কারণে নৌকায় পার হয়ে প্রতাপনগরে যেতে হয়। সড়ক নষ্ট হওয়া এবং এলাকা প্লাবিত হয়ে রাস্তা ডুবে থাকার কারণে ইউনিয়নের ২৫ হাজারের অধিক মানুষের চলাচলের জন্য এখন নৌকাই একমাত্র ভরসা।

প্রতাপনগরের তালতলার মাসুম বিল্লাহ বলেন, চারিদিকে পানি আর পানি। একটি রাস্তা-ঘাটও ভালো নেই। হেঁটে চলাচল করা যায় না। রাস্তায়ও বুক সমান পানি। সেজন্য নৌকায় করে চলাফেরা করতে হয়। বেদে সম্প্রদায়ের মতো নৌকায় বসবাস করতে হচ্ছে অনেককে। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।

প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া এলাকার মিলন বিশ্বাস বলেন, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে জোয়ারে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর তুফানের আঘাতে আঘাতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আজ পানিবন্দি অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে রান্না খাওয়া, দৈনন্দিন প্রাকৃতিক কাজ, সর্বোপরি দুর্বিষহ জীবনের অন্ত নেই তাদের। ইউনিয়নের হরিষখালির দু’টি ভাঙ্গন পয়েন্ট ও শ্রীপুর-কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ অংশের দু’টি ভাঙ্গন পয়েন্ট ও প্রতাপনগর সংলগ্ন পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রামের একটি ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে প্রতাপনগর ও বন্যতলায় নিয়মিতভাবে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর পানি জোয়ার-ভাটা খেলতে থাকে।

৪ জুন হরিষখালী ও ১৭ জুন কুড়িকাহুনিয়ার দৃষ্টিনন্দনে বাঁধে চাপান দেওয়া হলেও তা টিকেনি। পুনরায় ২১ জুন ঠিকাদারের সার্বিক প্রচেষ্টা ও এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধের চাপান কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই চাপানের মাধ্যমে ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড পানিমুক্ত হলেও হরিষখালী ও প্রতাপনগর সংলগ্ন পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রামের একটি ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে এলাকায় এখনো পানি প্রবেশ করছে। ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট, ঘরবাড়ি সব পানিতে ডুবে রয়েছে। এখানকার প্রধান সড়কেরও একই অবস্থা। এখানকার মানুষের এখন নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, ইয়াসের দেড় মাস পূর্ণ হল। এখানকার একটি রাস্তা-ঘাট ভালো নেই। ৬টি ওয়ার্ডের ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রধান সড়কগুলো বড় বড় খালে পরিণত হয়েছে। প্রতাপনগর থেকে আশাশুনি সদরে যেতে হলে নৌকায় করে পার হয়ে তারপর যেতে হয়। ভাটায় কিছুটা পানি সরলেও অনেক এলাকার পানি স্থায়ীভাবে থেকে গেছে। রাস্তায়ও চলাচলের কোন উপায় নেই। আগে যেমন প্রতাপনগর থেকে আশাশুনি টাবুরি নৌকায় করে যেতে হতো। ইয়াসের পর থেকে আমাদের ইউনিয়নে এখন সেই অবস্থা চলছে। এখানকার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা অথবা ভেলা।

তিনি আরও বলেন, বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটার কারণে সাতক্ষীরার আশাশুনি টু প্রতাপনগরের প্রধান সড়কের দুটি জায়গায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কে খেয়া পারাপার অথবা কোনভাবে পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। ইয়াসের পর থেকে প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া, ধঞ্চেরআইট, প্রতাপনগর, সনাতনকাটি, গোয়ালকাটি, দৃষ্টিনন্দনসহ এই ইউনিয়নের ২৫হাজারের অধিক মানুষের নৌকা একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ইয়াসের দেড়মাস পরও ১৭ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ আজও পানিবন্দি। মানুষ যে কী কষ্টের মধ্যে বসবাস করছে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রাস্তাগুলো সংস্কার ও মানুষের দু:খ কষ্ট লাঘবে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ খান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আশাশুনি ১৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। অন্য সব বাঁধ মেরামত করা গেলেও প্রতাপনগরের হরিষখালি, বন্যতলা ক্লোজার দিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। এলাকায় জোয়ার-ভাটা চলছে। ৫ থেকে ৬ হাজার পরিবার এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার ইট-খোয়া দ্বারা নির্মিত ২.১০ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক মিলে ১৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক মূল্যে ক্ষতি হয়েছে পাকা সড়কে ১.২৫ কোটি ও কাচা সড়কে ৩৬ লাখ টাকা। এসব এলাকার মানুষের চলাচলের সড়কগুলো নষ্ট হওয়ার ফলে তাদের এখন নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রতাপনগরের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রাশেদুর রহমান বাপ্পি বলেন, প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া পানি বন্ধ হয়ে গেছে। হরিষখালী বন্ধ করার পর নদীতে পানির চাপ থাকায় ভেঙ্গে যায়। পরে সেখানে চাপানের কাজ শেষ হয়েছে। বন্যতলা পয়েন্টে জাইকার অর্থায়নে ঠিকাদাররা কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সকল বাঁধের কাজ শেষ হবে এবং প্রতাপনগরের মানুষ পানিমুক্ত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, আমি সম্প্রতি এ জেলায় যোগদান করেছি। বিষয়টি অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি মন্ত্রণালয়ের কথা বলে দ্রুত যেটা করণীয় সেটা করব।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!