খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৩ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কাভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালক নিহত
  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার
বৃষ্টিতে দূর্ভোগ চরমে

ইয়াসের তিন মাস : বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় রাস্তায় বসবাস

নিতিশ সানা, কয়রা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তিন মাসেও পানি মুক্ত হতে পারেনি উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাতিরঘেরী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিন দশহালিয়া গ্রাম। শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের দুইটি পয়েন্টে বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় জোয়ারে ডুবছে ও ভাটায় জাগে। জোয়ার ভাটার খেলায় ঘরবাড়ী হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বেড়ীবাঁধে খুপড়ি ঘর বেঁধে কেউবা আবার নোনা পানির উপর টং বেঁধে বসবাস কর‌ছেন। দুটি ইউনিয়নের ১৩০ পরিবার এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বৃষ্টিতে দূর্ভোগ শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

  উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রাম। ঘূণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। ভেঙে যায় বেড়ীবাঁধের ১২ টি পয়েন্ট।বিধ্বস্ত হয়েছে ১২৫০ টি ঘর। তলিয়ে যায় দুই হাজার পাঁচ’শ চিংড়ী ঘের। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা এবং ১৫ হেক্টর জমির কৃষি ফসল নষ্ট হয়। স্হানীয় মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙে যাওয়া ১০টি পয়েন্ট বাঁধা সম্ভব হলেও দুইটি পয়েন্ট বাঁধা যায়নি। এই দুই জায়গায় প্রায় ১৩০ টি পরিবার বেড়ীবাঁধে বসবাস করছেন। তিন মাস অ‌তিবা‌হিত হ‌লেও পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড ওই দুই জায়গায় বাঁধ নির্মাণ কর‌তে সক্ষম হয়‌নি।

গাতিরঘেরী গ্রামে টং বেধে বসবাস করছেন গণেশ গাইন। তিনি জানান, পরিবারে আট জন সদস্য নিয়ে ১০ বিঘার একটি মৎস‌্য ঘেরে মাছ চাষ করে তার সংসার ভালো চলছিল। কিন্তু ইয়াসের তাণ্ডবে ঘর বাড়ি ও তার মৎস্য ঘের হারিয়ে সংসার নিয়ে বিপাকে আছে। জোয়ার এলে পানি থৈ থৈ করে শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে থাকতে হয়। বৃষ্টিতে কোন রকমে এক জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে হয়। এর আগে ২০০৯ সালে ঘুর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবেও শাকবেড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পাকা ঘরসহ তার সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন তিনি।

বেড়ীবাঁধের উপর বসবাসকারী গাতীরঘেরি গ্রামের অলোকা রানী ব‌লেন, ঘরবাড়ী হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে তিন মাস ধরে রাস্তায় বসবাস করছি। কোন রোজগার নেই। মাঝে মধ্য ত্রানের চাল পাই তাই দিয়ে চলছে জীবন।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, যেটুকু জায়গা জমি ছিলো এর আগে আইলার তান্ডবে তা ভেঙে নদীতে চলে গেছে। কয়দিন আগে তিনকাটা জমি কিনে একটা ঘর বাঁধা শুরু করেছিলাম। সে ঘরে একটি রাতও থাকতে পারিনি। সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এবারের জলোচ্ছ্বাসে। ৩ দিন না খেয়ে ছিলাম । বাঁধ হলেও ঘরে ফিরতে পারবো না। তারপরও বাঁধ হলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম।

সুব্রত সরকার বলেন,নদী ভেঙ্গে আমরা পানিবন্দী হয়ে পড়েছি প্রায় তিন মাস হলো।এখনো বাঁধ হয়নি। খে‌য়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে খোলা আকাশের নিচে বাস করছি। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে পাশ বন্ধ, দিনমজুরের কাজও হচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে যে সহযোগিতা পেয়েছি তাই খেয়ে কোন রকমে দিন পার হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ হলেও ঘর বাধার জায়গা নেই আমার।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, উত্তর বেদকাশির গাতিরঘেরী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে যারা ঘর বাড়ি হারিয়ে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে তাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।গাতিরঘেরীর শাকবাড়িয়া নদীর ভেঙ্গে যাওয়া বেড়ীবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে অচিরেই ঘরে ফিরতে পারবে এই এলাকার মানুষ।

খুলনা গেজেট/টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!