একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন আর ফোনে নেট চলার মত এমবি থাকলেই যথেষ্ট। অনলাইনে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা জমা করলেই মোবাইলে চলে আসছে ভিডিও। এই ভিডিও দেখলে অ্যাকাউন্ট মালিক পেয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা। জমার পরিমাণ যত বেশি আয়ও তত বেশি।
এমন খবরে যশোরের চৌগাছার অসংখ্য মানুষ অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলে লাখ লাখ টাকা জমা করার পর হঠাৎ গত দুই দিন ধরে মোবাইল এ্যাপস বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে বলছেন এটি অতি লোভে তাঁতী নষ্টের মত ঘটনা।
একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২ মাস ধরে টু লাইকসহ বেশ কিছু অনলাইন প্লাটফর্মে রমরমা ব্যবসা চলে আসছে। এই ব্যবসার জন্য তেমন কিছুর প্রয়োজন নেই। একটি এন্ড্রয়েড ফোন আর নগদ অর্থ হলেই যথেষ্ট। যারা এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তাদের অধিকাংশই ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী। প্রায় দুই মাস ধরে চৌগাছা শহর ও শহরতলীতে শত শত মানুষ নেটের এই ব্যবসা করে দিনে বেশ রোজগার করেছেন।
এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ি, চাকরীজীবি, চা বিক্রেতা, বেকার যুবকসহ এমন কোন পেশার মানুষ নেই যে এই ব্যবসা শুরু করেননি। কোন প্রমাণ নেই, নেই কোন ব্যক্তি অথচ মানুষ হাজার হাজার টাকা দিয়ে ওই এ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ভিডিও দেখলে টাকাও জমা হচ্ছিল। তবে গত ২ দিন ধরে নেটে সব কিছু আছে কিন্তু নেই টাকা জমা হওয়ার সেই এ্যাপস, ফলে তারা দিশেহারা।
চৌগাছা বাজারের এক তরুণ ব্যবসায়ি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় ৮/১০ দিন আগে ইন্টারনেটে তিনি ১১ হাজার টাকা জমা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। গত এক সপ্তাহে সে ৯ হাজার টাকার মত আয় করেছেন, কিন্তু দুই দিন ধরে আর ভিডিও আসেনা, এমনকি যে এ্যাপস ব্যবহার করা হত সেটিও বন্ধ রয়েছে।
এই ব্যবসায়ি আরও জানান, শুধু পৌর এলাকাতেই শত শত মানুষ এই ব্যবসা করছিলেন। অনেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন, তারা কোন টাকা রোজগার করতে পারেননি, তার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে নেট ব্যবসা।
বুধবার বিকেলে বাজারের বিভিন্ন চায়ের দোকানসহ যেখানেই কিছু লোকসমাগম হয়েছে সেখানেই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু ছিল নেট ব্যবসা। এ সময় অনেকেই প্রশ্ন করেন হুন্ডি কাজলকে তো মানুষ দেখতে পেয়েছে কিন্তু নেটে তো কারও দেখা যায়নি তারপরও কেন মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ল ? এটি হচ্ছে অতি লোভে তাঁতী নষ্টের সামিল।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইন্টারনেটে মোবাইল এ্যাপসে যেয়ে টু লাইক নামের একটি এ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এটিতে ২ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা দেয়া যায়। যে যত বেশি টাকার একাউন্ট খুলবে তার বেশি রোজগার হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার পর মাঝ রাতে ১২ থেকে ১৫ মিনিটের ৩০টি বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আসে। এই ভিডিও দেখলে নিজের ওই অ্যাকাউন্ট জমা পড়বে নির্দিষ্ট পরিমাণের ডলার। পরবর্তীতে তা ভাঙিয়ে বাংলাদেশী টাকায় রূপান্তরিত করা যাবে। প্রথম অ্যাকাউন্ট হোল্ডার এ ধরণের অ্যাকাউন্ট যত বেশি ব্যক্তিকে খুলে দিতে পারবে সেখান থেকেও একটি অংশ জমা হবে আগের ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে।
সর্বশেষ গত ১ সপ্তাহ আগে এ্যাপসে ঘোষণা দেয়া হয় ৩শ’ ডলার দিয়ে কেউ যদি অ্যাকাউন্ট খোলে তাহলে ওই ব্যক্তি বোনাস হিসেবে ৯০ ডলার পাবে। এমন খবরে এই এ্যাপস ব্যবহারকারিরা এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েন। লাখ লাখ টাকা জমা করার পর এখন এ্যাপস বন্ধ, ভুক্তভোগীদের মাঝে বয়ে যাচ্ছে নীরব কান্না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসপিসি(SPC), এলটি(LT), রিং আইডিসহ এ ধরণের আরও বেশ কয়েকটি অনিশ্চিত অনলাইন প্লাটফর্মে আইডি খুলে কাজ করছে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করছেন লাখ লাখ টাকা।
প্রতারণার হাত থেকে এলাকাবাসিকে রক্ষা করতে সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই