খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মেহেরপুরের গাংনীতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি উল্টে চালক নিহত
  ৮৬ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলা : হলমার্কের জেসমিনকে জামিন দেননি আপিল বিভাগ
  আইনজীবী আলিফ হত্যা : ভিডিও দেখে শনাক্ত ১৩ জন, গ্রেপ্তার ৭

ইটভাটা শ্রমিকের সন্তানদের আলোকিত করতে ‘অনুশীলন মজার স্কুল’

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবিকার তাগিদে দূর-দুরান্ত থেকে খুলনার রূপসা উপজেলার আঠারোবেঁকি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ইটভাটা গুলোতে কাজ করতে আসে অনেক হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল পরিবার। বছরের নয় মাস ধরে তারা ভাটাগুলোতে কাজ করে। এমন অবস্থায় লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে বসে তাদের সন্তানদের। ওই শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে গড়ে উঠেছে অনুশীলন মজার স্কুল।

সরেজমিনে উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের নেহালপুর খেয়াঘাট এলাকার আঠারোবেঁকি নদীর তীরে গড়ে তোলা স্কুলটিতে গিয়ে জানা যায়, স্কুলে মোট ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৬৫ জন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা এখানে লেখাপড়া শিখছে। যে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়া সত্ত্বেও যায় না বা গ্রামের বাড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো কিন্তু জীবিকার তাগিদে মা-বাবার সাথে ইটভাটাতে বছরের ৭ থেকে ৯ মাস থাকতে হচ্ছে, ঝরেপড়া রোধে তাদের শিক্ষায় রয়েছে মাত্র ৪ জন শিক্ষিকা। তারা বিনা পারিশ্রমিকে এসকল ভাটা শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ছয় বছর বয়সের শিশু আবু সায়েদ। ওদের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বসুন্দিয়া এলাকায়। শিশু আবু সায়েদের বাবা থাকতেও নেই। অনেক বছর আগেই পারিবারিক কলহের জের ধরে তার মা-বাবার তালাক হয়ে যায়। এরপর থেকে তার মা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ শুরু করে। বছরের নয় মাস তারা এখানে থাকে ও তিন মাস ফিরে যায় নিজের ঠিকানায়।

আবু সায়েদ জানায়, স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে, আমি মায়ের সাথে ইটভাটার ভিতরে থাকতাম। এখন আমি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন স্কুলে আসি। এখানে আমার অনেক কম বন্ধু। ম্যাডামরা আমাদের বাংলা, ইংরেজি, অংক পড়ান। তারা আমাদের কবিতা পড়ে শোনান। স্কুলে আসতে আমার অনেক ভালো লাগে।

ওই বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে সাত বছর বয়সের আবুরা। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার গোরম্বা এলাকায়। মা-বাবা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে। জিবীকার তাগিদে নিজ এলাকা ছেড়ে এসেছে অন্য এলাকায়।

আবুরা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ নেই। ফ্যান নেই, গরমে বসে লেখাপড়া করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করা হলে আমরা মন দিয়ে লেখাপড়া করতে পারবো।

স্কুলটির শিক্ষিকা বৈশাখি খাতুন বলেন, ইটভাটার এসকল শিশু লেখাপড়ার সুযোগের অভাবে ঝরে না পড়ে সেজন্য আমরা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।

 

স্থানীয় রুহুল আমিন বলেন, নেহালপুর এলাকায় অনেকগুলো ইটভাটা রয়েছে। দূর-দুরান্ত থেকে অনেকেই এসকল ভাটায় জীবিকার তাগিদে কাজ করতে আসে। এখানে এসে অনেক পরিবাবের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই স্কুলটি হওয়ায় ইটভাটা গুলোর সুবিধা বঞ্চিত ভাসমান শিশুদের জন্য বিদ্যালয় তৈরি হওয়ায় ওরা লেখাপড়া শিক্ষতে পারবে। ওরাই আগামীদিনের ভবিষ্যত।

অনুশীলন মজার স্কুলের পরিচালক অলোক চন্দ্র দাস বলেন, আমরা ২০১৫ সাল থেকে রুপসা উপজেলার ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইটভাটা গুলোতে যেসব পরিবার জীবিকার তাগিদে অনেক দূর থেকে এই সব ইটভাটায় কাজ করতে আসে। তাদের সন্তানরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। সেজন্য গতবছর স্কুলটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমার বিশ্বাস এই শিশুরা একদিন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!