সাতক্ষীরার আশাশুনির কাদাকাটি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া বাজার এলাকায় মাদক উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সাদা পোশাক থাকা পুলিশের উপরে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় আরও ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ও সোমবার পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যহত রয়েছে।
পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান অব্যহত থাকায় একরকম পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে আশাশুনির কাদাকাটি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকা। গণ গ্রেপ্তার এড়াতে ওই এলাকায় এখন ১৫ বছর থেকে ষাটোর্ধ বয়সী পুরুষরা বাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত তিনদিনে পুলিশের দায়ের করা মামলায় মোট ১৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাতক্ষীরার আশাশুনির তেঁতুলিয়া গ্রামের রেজাউল গাজীর ছেলে সোহাগ গাজী, মৃত ইয়ার আলী ফকিরের ছেলে আকবর ফকির, ব্রাহ্মণ তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দীন মোড়ল ওরফে পাগলা মোড়লের ছেলে রইচ উদ্দিন মোড়ল ওরফে বড় খোকন, নূর ইসলাম গাজীর ছেলে ফারুক হোসেন, রেজাউল মোড়লের ছেলে কামরুল ইসলাম, এলাহী গাজীর ছেলে রেজাউল গাজী, তেঁতুলিয়া উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে রুস্তম আলী, মৃত শাহজাহান গাজীর ছেলে জাহাঙ্গীর গাজী, মৃত মোহাম্মদ আলী মোড়লের ছেলে হাবিবুর রহমান, মিত্র তেঁতুলিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম সানার ছেলে শাহিনুর ইসলাম। এছাড়া এর আগে তেঁতুলিয়া গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে আজিজুল সরদার বাবু, মৃত ছবেদ আলী সরদারের ছেলে শহিদুল সরদার, মৃত গোলাম নবী সানার ছেলে মাসুম বিল্লাহ, রুহুল আমিন সানার ছেলে শফিকুল ইসলাম ও সিদ্দিক সরদারের ছেলে আশানুর সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর তদন্ত জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সাতক্ষীরার ডিবি পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ দিকে গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারের সদস্যদেরকে থানার সামনে ভিড় করতে দেখা গেছে। এসময় অনেককে বলতে শোনা গেছে, ‘আমাদের সন্তান বা স্বামী আদৌ এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না বা ঘটনার সময় অন্য জায়গায় কর্মরত ছিল। অহেতুক তাদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে’। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে তেঁতুলিয়া গ্রাম প্রায় পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে রাতে কেউ বাড়িতে ঘুমাতে পারছেনা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছে গ্রামবাসী। তারা এব্যাপারে জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে রাসেলের ভগ্নিপতি সাবেক বিমান বাহিনী কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল পুরাতন বাসষ্টান্ড এলাকায় তার স্ত্রী নামজা খাতুন, শ্যালক রাসেল ও তার বড় বোন নিলুফার ইয়াসমিনের নামে সাড়ে ১৩ কাঠা জমি রয়েছে। ওই জমির মধ্যে সোয়া চার কাঠার উপর আমার শশুরের করা দ্বিতল বাড়িটি ভায়রা বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট ফারুক দখল করে আছেন। বাকি দুই ভাগ সোয়া আট কাঠা জমিও সে বিনা টাকায় নিতে চায়। সম্প্রতি তার স্ত্রী নাজমা ও শ্যালক রাসেল তাদের নামের জমির অংশ অন্যত্রে বিক্রি করার জন্য খদ্দের খুঁজছিল। বিষয়টি জানতে পেরে ফারুক রাসেলের উপর ক্ষেপে যায়। এককভাবে ওই সম্পূর্ণ জমি নিজে গ্রাস করার জন্য ফারুক পরিকল্পিত ভাবে রাসেলকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার জন্য এই ইয়াবা উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছেন। তিনি এঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
প্রসঙ্গতঃ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশাশুনি থানার এসআই গাজী নুর নবী সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য মোহন কুমার সেনকে নিয়ে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মাদক দ্রব্য আছে এমন সন্দেহে তেঁতুলিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ সরদারের ছেলে রাসেলকে তেঁতুলিয়া বাজার থেকে আটক করে। এসময় তাকে ও তার মটরসাইকেল তল্লাশী করে কোন মাদ্রক দ্রব্য পায়নি পুলিশ। রাসেলকে তল্লাশীর এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে থাকেন বাজারে উপস্থিত লোকজন। তল্লাশীর এক পর্যায় তার গাড়ির পাশে ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ সদস্য মোহন কুমার সেন। এসময় রাসেল চিৎকার দিয়ে বলে, আমাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। আপনারা কে কোথায় আছেন আমাকে উদ্ধার করেন। তার চিৎকার শুনে চতুর্দিক থেকে লোকজন ছুটে এসে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের উপরে অতর্কিত হামলা করে। এতে এস আই গাজী নুর নবী ও পুলিশ সদস্য মোহন কুমার সেন আহত হন। এসময় রাসেল ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। এক পর্যায় বাজারের লোকজন পুলিশকে পার্শ্ববর্তী একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে।
এ খবর জানতে পেরে আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা থেকে আশা অতিরিক্ত পুলিশ সহ ডিবি পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে আটক থাকা পুলিশ সদস্যদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এসআই গাজী নুর নবী বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তেঁতুলিয়া বাজারে সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।