সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর পাউবো’র বেড়িবাঁধের ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে হঠাৎ করে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের বেড়িবাঁধে এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। মুহুর্তের মধ্যে প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধের সামনের মাটি ডেবে গিয়ে নদীতে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশ থেকে দু’টি গ্রুপে ৪৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধের সংস্কারের কাজ চলছে। এমত অবস্থায় শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধের সামনের অংশ নদীতে চলে যায়। বিষয়টি দেখার সাথে সাথে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামবাসীরা জানান, খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধ একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে বিছট গ্রামের প্রায় অর্ধেক জায়গা খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে চলে গেছে। এ গ্রামের ৫০ এর অধিক পরিবার তাদের ভিটাবাড়ি হারিয়ে গ্রাম ছাড়া হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে নদীপাড়ের কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এ জনপদের মানুষ। তারা বিছট গ্রাম রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
আনুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে বিছট প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদী রক্ষা বেড়িবাঁধে ভাঙন লেগে আছে। একাধিকবার এ স্থানটি সংস্কার করা হলেও নদীর প্রবল স্রোতের কারণে ভেঙ্গে তা যায়। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি ফোল্ডারের মাধ্যমে ৪৩০ মিটার রাস্তা সংষ্কারের জন্য পেলেসিং এর কাজ চলমান রয়েছে। কাজও প্রায় শেষের পথে। কিন্তু শুক্রবার সকালে নির্মানধীন কাজের মধ্যে ১০০ ফুট বেড়িবাঁধের সামনের অংশে ফাটল ও ভাঙ্গনে নদীর গর্ভে চলে যায়। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিছট গ্রামের খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধে ভাঙ্গনের সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসী একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে। হঠাৎ করে দুপুরের জোয়ারে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট ভেঙে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পান উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে অগামী দুই এক জোয়ারের মধ্যে বাঁধ ভেঙ্গে আনুলিয়া খাজরা সহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকার দায়িত্বে থাকা পাউবো’র সেকশনাল অফিসার (এসও) মোঃ সুমন হোসেন বলেন, ভাঙ্গনের খবর পাওয়ার পরে শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই ভাঙ্গনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মরিচ্চাপ নদীর স্রোতের টানে বেড়িবাঁধের প্রায় ৪০০ ফুট এলাকা ভেঙে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বড় ধরনের ফাঁটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে কাঁচা বাজারের নির্মাণাধীন ছাউনি, আল আকসা জামে মসজিদসহ প্রকাধিক প্রতিষ্ঠান।
এ ঘটনায় পুরো এরাকাজুড়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা জমির বোরো ধান ও শতশত বিঘা জমির তরমুজ ক্ষেতসহ বহু মৎস্য ঘের লোনা পানিতে প্লাবিত হতে পারে। নদী ভাঙনের খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নোমান হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি বলেন, এই বেড়িবাঁধের কাজ যদি দ্রুত না করা হয় তাহলে বড়দল ও খাজরা ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টা পুলিশের না হলেও তিনি তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে জরুরি ভাবে বাঁধের কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, আমি ছুটিতে থাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। যত দ্রুত সম্ভব বাঁধ সংস্কার কাজের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে পাউবো বিভাগ-২ এর আশাশুনি এলাকার দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয় ঢাকায় আছেন। রোববার তিনি সাতক্ষীরায় ফিরে আসবেন। তিনি আসার পর তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিছট ও গোয়ালডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা করব।
খুলনা গেজেট/এনএম