জলাবদ্ধতা নিরসনে পুনরায় খনন করা হয়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা সদরের কোল ঘেসে বয়ে যাওয়া মারিচ্চাপ নদী। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর তত্ত্বাবধানে ৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৮৬৫ কিলোমিটার খননকাজে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক নেতার ইটভাটা রক্ষা করতে নদীটির বাক পরিবর্তন করে খনন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সারা দেশে অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের অধীনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মরিচ্চাপ নদী খনন সম্প্রতি শেষ হয়েছে। কাজটি পায় ফেনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আহমেদ। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট কার্যাদেশ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। যদিও তার আগেই কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। এতে করে ইটভাটা রক্ষায় নদীর বাঁক পরিবর্তনের কারণে নাব্যতা সংকট দেখা দিবে। ফলে নদী আবারো ভরাট হয়ে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরিচ্চাপ নদীর এক পাশে রয়েছে আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের ইটভাটা। অপর পাশে রয়েছে ইকো পার্ক। অভিযোগ রয়েছে, স্থাপনাটি অক্ষুন্ন রাখতে নদীর একাংশের বাঁক পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে নদীটি দ্রুত নাব্যতা হারিয়ে আবারো ভরাট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, নদীটি খননের সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বাক পরিবর্তন না করতে বারবার আপত্তি জানান। এ সময় তারা নদীর অপর পাশে চরে গড়ে ওঠা ইটভাটা অপসারণের তাগিদ দেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এলাকাবাসীর আপত্তির বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। ইটভাটা অরক্ষিত রাখতে নদীর একাংশে বাঁক পরিবর্তন করে খনন করা হয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি কোনো কাজে আসবে না বলেও দাবি তাদের।
আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহিন হোসেন জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের ইটভাটা মরিচ্চাপ নদীর মধ্যেই পড়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ইটভাটা রক্ষায় নদীর একাংশে ঘুরিয়ে খননকাজ শেষ করেছে। মরিচ্চাপ নদী খননকাজ শুরুর সময় তারা ইটভাটা অপসারণে একাধিকবার আপত্তি জানিয়েছিলেন, কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কেউ আপত্তির বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। বরং ইটভাটা রক্ষা করেই নদী খননকাজ শেষ করেছে। ইটভাটার কারণে নদী দ্রুত ভরাট হয়ে যাবে।
মরিচ্চাপ নদীপাড়ের বাসিন্দা সুমন হোসেন জানান, যে উদ্দেশ্যে সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে মরিচ্চাপ নদীটি খনন করেছে তা কোনো কাজে আসবে না। ইটভাটা রক্ষা করতে গিয়ে নদীর একাংশ বেঁকে গেছে। মরিচ্চাপ নদীর নাব্যতা ফিরে পেতে ইটভাটা অপসারণের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত শামীম আহমেদ বলেন, মরিচ্চাপ নদী খননে হয়রানি হতে হয়েছে। নদীর এক পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকিমের ইটভাটা, অন্য পাশে রয়েছে প্রশাসনের পার্ক। ভাটা ও পার্ক অক্ষুন্ন রেখেই নদী খনন শেষ করা হয়েছে। এতে খননকাজ যেমন বিঘ্নিত হয়েছে তেমনি সময়ও লেগেছে অনেক বেশি। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় থাকলেও খননকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, তাই কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ইটভাটা যেখানে ছিল সেখানেই আছে। মরিচ্চাপ নদী খনন তো শেষ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডও নিয়ম অনুযায়ী তাদের কাজ করেছে। এখন আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিপক্ষের লোকজন এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর বলেন, নদীতে ইটভাটা রেখে খনন হয়েছে এমন বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাকে কোন কিছু জানায়নি। তাছাড়া এ বিষয়ে কোন অভিযোগও পাওয়া যায়নি। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম