খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২
  সাতক্ষীরার তালায় ধানের ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত আরও ১১ জন

আ’লীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বে খুন-খারা‌বিসহ নানা অপরাধ, অশান্ত যশোরের চুড়ামনকাটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরাঞ্চলে এক সময় ভয়ঙ্কর জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিলো চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন। সে সময় ইউনিয়নবাসীর ঘুম ভাঙ্গতো খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের খবর শুনে। এরপর পুলিশি তৎপরতায় ও কয়েকজন চিহিৃত সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় সে অবস্থার পরিবর্তন হয়। বিগত কয়েক বছরে অশান্ত জনপদটি পুরোপুরি শান্ত হয়ে ওঠে। মানুষ ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ভুলে যায়।

কিন্তু বর্তমানে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিগত দিনের ন্যায় এখানকার অপরাধিরা আবারো রক্তের খেলায় মেতে উঠছে। কিছু হলেই খুন, জখম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কোন কিছুই থামছে না অপরাধীদের তৎপরতা। মূলত আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছে। ইউনিয়নটি শান্ত করতে এখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। কিন্তু থেমে নেই সন্ত্রাসীদের অপকর্ম।

ইউনিয়নবাসী ও পুলিশ সূত্রে তথ্য মিলেছে, গত দু’মাসে চুড়ামনকাটিতে হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সর্বশেষ ২১ মার্চ গোবিলা গ্রামে দলীয় ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান শিমুলকে। যা এলাকাবাসীর হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। যদিও পুলিশ হত্যাকারীদলের দু’সদস্য বুলবুল ও নাঈমকে আটক করেছে। কিন্তু প্রশাসন আগে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অকালে প্রাণ দিতে হতো না শিমুলকে। এর দশদিন আগে ১১ মার্চ নিজ দলীয় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে গুরুতর জখম করে অপর যুবলীগ নেতা শ্যামনগর গ্রামের বদিউজ্জামান বাদলকে। সে ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়া, ২০ মার্চ রাতে দোগাছিয়া বাজারে চুরি, ১৩ মার্চ ঝাউদিয়া গ্রামে ডাকাতি হয়। ১৫ মার্চ পোলতাডাঙ্গা গ্রামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা, ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি চুড়ামনকাটির দাসপাড়ার চয়ন দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা, ১ ফ্রেব্রুয়ারি চুড়ামনকাটি বাজারের ৪টি দোকানে চুরি হয়। এছাড়া, চুড়ামনকাটি দাসপাড়ায় কয়েক দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। বিগত ইউপি নির্বাচনের পর সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন আলমকে দিনদুপুরে চুড়ামনকাটি বাজার থেকে তুলে নিয়ে আদর্শপাড়ার কাজীর পুকুরপাড়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এভাবে প্রতিদিনই ঘটছে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন জুড়ে ছোটখাট নানা অপরাধ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মূলত তখন থেকেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে। বিগত ইউপি নির্বাচনের পর থেকেও দলীয় নেতাকর্মীরা কয়েকটি পাল্টাপাল্টি মামলার আসামি হয়েছেন।

ইউনিয়নের একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, নিজেদের মধ্যে ইউনিয়নে প্রভাব বিস্তারের জন্য এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড লেগেই রয়েছে। বর্তমানে নিজ দলের নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি নিরসনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দাউদ হোসেন বলেন, তিনি নির্বাচিত হবার পর থেকে ইউনিয়ন জুড়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হত্যা ও হামলাসহ নানা অপরাধের সাথে কারা জড়িত তাদেরকে চিহিৃত করা হচ্ছে। দ্রুতই এসব অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে।

এ ব্যাপারে ইউনিয়নের সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ এস আই সেলিম হোসেন বলেন, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নটি শান্ত রাখতে সর্বদা পুলিশি টহল জোরদার রাখা হয়। বর্তমানে নানা অঘটনের পর গোটা ইউনিয়ন জুড়ে পুলিশি নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি ইউনিয়নে শান্তি বজায় রাখতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যশোরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সব সময় সচেষ্ট রয়েছে থানা পুলিশ। ইতিমধ্যে চুড়ামনকাঠির শিমুল হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। হত্যাকারীদলের দু’সদস্য বুলবুল ও ইমন আটক হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে ও নেপথ্যের কারণও জানা গেছে। খুব দ্রুতই চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!