সারা দিন টিপ টিপ করে বর্ষা হতিলো আর মাইকিং করতিলো সাইক্লোনে জাতি। সন্ধ্যার আগে আমি মেয়েকে নিয়ে সাইক্লোনে গিলাম। রোজা থাকি ইফতারিও করতি পারিনি। সকাল বিলায় বাসায় আসি দেখি ভিটিতে কিচ্ছু নেই। রাত্রি ঝড়ের সময় রাস্তা ভেঙ্গে আমার বাড়ির উপর দিয়ে বড় খাল হয়ে গেছে। হাঁস, মুরগী ও ৫টি ছাগল ছিল। সেগুলোও পাইনি। পরনে কাপড় ছাড়া আর কিচ্ছু ছিলোনা।
সুপার সাইক্লোন আম্পানের রাতের ভয়াল বর্ণনা দিতে যেয়ে দুঃখ ভরাক্রান্ত মনে এমনটি বললেন খুলনার কয়রা উপজেলার ৩ নং ওয়ার্ডের ঘাটাখালির বাসিন্দা বিধবা রোকেয়া খাতুন।
তিনি আরও বলেন, ঘর বাঁধারও কোন জায়গা না পেয়ে তখন আবার চলে যায় সাইক্লোনে। এক মাস ২২ দিন সাইক্লোনে থাকি। এর কাছে ওর কাছে চেয়ে চলতে থাকি। পরে আবার রাস্তার উপর ঝুঁপড়ি বেধে গাঙ্গে জাল টানি খাতি থাকি। কিন্তু রিংবাধ হয়ি যাওয়ার পর আমাদের রাস্তা থেকে উঠায় দিছে ওয়াপদার কাজ হবে বলে। যেখানে আমার ঘর ছিলো সে জায়গার উপর দিয়ে এখন বড় ওয়াপদা হয়ছে। তাই এখন অন্যের জায়গায় ছোট্ট একটা ঘর বান্ধি থাকি। পরের বাড়ি কাজ করি, যে দিন কাজ থাকেনা সে দিন নদীতে মাছ ধরি। যে টাকা আয় করি তাতে মেয়ের পড়াশোনা আর সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই আতংকে থাকি, আবার কখন ঘর ভেঙ্গে যায়।
রোকেয়া জানান, তার বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরা জেলায়। সংসারও চলছিলো বেশ। বিয়ের পরে কন্যা সন্তানের মা হন রোকেয়া। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বেশিদিন সংসার করা হয়ে ওঠেনি। ছোট্ট মেয়েকে রেখে ১০ বছর আগে মরণব্যাধী ক্যান্সারে মারা যান তার স্বামি ওহাব সরদার। মেয়েকে মানুষ করবেন বলে চলে আসেন পিতার বাড়ি। অন্যের বাড়ি কাজ করে ও নদীতে মাছ ধরে কোন রকমে চলছিলো তার সংসার। পিতা একটা ঘর বাধার জায়গাও দিয়েছিল। তবে সুপার সাইক্লোন আম্পান সেটুকু কেড়ে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি এক বছরে সরকারি কিচ্ছু পাইনি। আমাদের এখানে অনেকে পাকা ঘর পাচ্ছে। শুনেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাগো মতন লোকের ঘর করে দিচ্ছেন। আমি একটা ঘর পেলে সারাদিন কাজ করে মেয়েকে নিয়ে শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারতাম।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল গফ্ফার ঢালী বলেন, আমি তাকে চিনি। তারা খুবই অসহায়। কোন জায়গা জমি নেই। আম্পানে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে তাদের ঘরের উপর দিয়ে খাল চলে গেছে। বাঁধ হলেও তার ঘর বাধার জায়গা নেই। এজন্য অন্যের জায়গায় ছোট্ট একটা ঘর বেধে বসবাস করছে। এনজিও’র মাধ্যমে তাদেরকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোন সহায়তা তাকে করতে পারিনি। আমাদের এখানে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের যে ঘর দিচ্ছেন সেই ঘরও তিনি পাওয়ার যোগ্য। তবে আমাদের ওয়ার্ডে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ। এদের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে ৭ জনকে ঘর দেয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই