খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  নরসিংদীতে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২
  সাতক্ষীরার তালায় ধানের ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত আরও ১১ জন

আফগানিস্তানে ছেলেদের স্কুল খুলেছে, মেয়েদের ব্যাপারে চুপ তালেবান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়’- এ বহুল প্রচলিত প্রবাদের মতোই ‘বাঘ’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে তালেবান। তালেবান যতই আগের অবস্থানে ফিরে যাবে না বলে ‘ছেলে ভুলানো গল্প’ বলুক, ধারণা করা হয়েছিল ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলের তুলনায় আরও ভয়াবহ মূর্তিতে আবির্ভূত হচ্ছে তারা। সেই ইঙ্গিতের সমর্থনেই এবার তারা নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ করতে চলেছে। শনিবার আফগানিস্তানে মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার আগে শুক্রবারের নির্দেশনায় ছেলে ও শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার আদেশ দিলেও মেয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকাদের জন্য কোনো নির্দেশনা দেয়নি তালেবান। দ্য গার্ডিয়ান।

আফগানিস্তানের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল খুলেছে শনিবার। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দীর্ঘ এক মাস পর ৩৪টি প্রদেশের কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও সেমিনারি স্কুল খুলেছে। তবে ছেলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে পারলেও মাধ্যমিক স্তরের মেয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকাদের স্কুলে যেতে দেখা যায়নি।

শুক্রবার তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছিল, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে নারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ফিরতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তালেবান সরকারের এই আদেশে বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আদৌ আর কখনো কোনো মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে ফিরতে পারবে কি-না এ বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলেছেন, এবারের তালেবান আগের শাসনামলের মতো হবে না। ওই সময় নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার তালেবান ক্ষমতায় এসেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মেয়েদেরকে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিলেও ক্লাসে ছেলে-মেয়েদের আলাদা বসার আদেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে একসময় পুরোপুরিভাবে নারীশিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে।

আফগানিস্তান অ্যানালিটিস নেটওয়ার্কের সহ-পরিচালক কেট ক্লার্ক বলেন, ‘তালেবান ক্ষমতা দখলের পর নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও তা থেকে সরে আসছে। তারা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না।’ নারীদের ওপর তালেবানের কঠোরতার আরও একটি লক্ষণ হলো, সাবেক মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ব্যভিচার রোধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভাইস অ্যান্ড ভার্সার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা। এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে আফগানিস্তানে নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা দেওয়া তালেবানদের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। সব আয়োজন শেষ, এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি।

কেট ক্লার্ক বলেন, ‘ইসলামে শিক্ষা এবং সাক্ষরতার অত্যন্ত মূল্য দেওয়া হয়েছে। তালেবানরা ইসলামের দোহাই দিয়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করতে পারে না। তারা বলে আসছে, নিরাপত্তার উন্নতি হলে স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হবে। আগের শাসনামলে মেয়েদের জন্য স্কুলগুলো আর কখনো খোলা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘তবু এই সিদ্ধান্ত মহিলাদের শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে পারেনি। বাড়িতে ছোট ছোট ক্লাসের মাধ্যমে, দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে প্রদেশগুলোতে নারীশিক্ষা অব্যাহত ছিল।’ কিন্তু যদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মেয়েদের জন্য কোনো নির্দেশনা না আসে, তাহলে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের অনুমতি অর্থহীন হয়ে যাবে। কারণ,

চলমান শিক্ষার্থীরা পাশ করে বেরিয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে পরবর্তী মেয়েদের উচ্চশিক্ষা।’

এদিকে অর্থনৈতিক পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে ঠেকেছে তালেবান সরকার। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সাহায্য তহবিলের আবেদন করেছে তারা। নারী সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের আচরণ ও নীতিমালা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বহির্বিশ্ব। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও গভীর অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনছে গোষ্ঠীটি। কারণ, নারীবিদ্বেষী মনোভাবে অটল থাকলে তালেবান সরকার কখনোই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাবে না, কোনো অর্থনৈতিক সহযোগিতা তো নয়ই।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!