জাকারিয়া ও জাফরিন দু’ভাই। এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের দু’ভাইয়ের নামে খানজাহান আলী থানা এলাকার মশিয়ালী গ্রামের ট্রিপল মার্ডারের মামলা রয়েছে। গেল কিছুদিন হল তারা ওই ট্রিপল মার্ডারের মামলায় জামিনে বের হয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার খুলনার পথেরবাজারে শতভাগ রপ্তানীমুখি প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং কারখানায় চাঁদা আনতে গিয়ে সন্ত্রাসী জাফরিন পুলিশের কাছে আটক হয়। তবে জাফরিন আটক হলেও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতঙ্কে দিন পার করছেন।
সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং কারখানার কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার গোলাম সারওয়ার বলেন, ৬ মাস ধরে জাফরিন বিভিন্ন সূত্র দিয়ে ফোন দিতে থাকেন। ওই সময় থেকে তিনি বলতে থাকেন এলাকায় আমাদের অনেক ছোট ভাই রয়েছে। তাদের এ প্রতিষ্ঠানে চাকরী দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। ফোনের মাত্রা গত কয়েকদিন ধরে আরও বাড়তে থাকে। রোববার এর পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। রোববার সকালে জাফরিন ফোন করে তার অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় বাচ্চাদের জামা কাপড় কিনছি। এমন উত্তর দিলে জাফরিন বলেন, আমাদেরও কিছু ছোটভাই আছে। তাদের জন্যও কিছু কিনতে হবে। ম্যানেজার বলেন, এসব বিষয় আলাপ করতে হলে আমার উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করতে হবে। তাছাড়া এর আগে জাফরিনের ফোনের ব্যাপারে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানান তিনি।
আরও পড়ুন : চাঁদা আনতে গিয়ে সন্ত্রাসী জাফরিন আটক
রোববার সন্ধ্যার পর জাফরিন তাকে খুঁজতে অফিসে আসেন। তার ভয়ে সারওয়ার প্রথমে এমডির কক্ষে ও পরে বাথরুমে লুকিয়ে থাকেন। খুঁজে না পেয়ে জাফরিন ম্যানেজার সারওয়ারকে বাসায় খুঁজতে যায়। সেখানে না পেয়ে তার স্ত্রীকে শাসিয়ে আসে জাফরিন। পরবর্তীতে জোরপূর্বক ওই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচারণ করতে থাকলে সোহেল ফারাজীর মাধ্যমে জাফরিনকে ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এরপর বিষয়টি মধ্যস্থতা করতে আসেন বড়ভাই জাকারিয়া। এরইমধ্যে স্থানীয় জননী হোটেলের সামনে থেকে এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশের হাতে আটক হয় জাফরিন। রাতে তার বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সোহেল ফারাজী মামলা দায়ের করেন, যার নং ৫ । এ মামলায় জাফরিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, তারা দু’ভাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। জামিনে বের হয়ে তার ক্ষতি করতে পারে এমন শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, জাকারিয়া ও জাফরিন মশিয়ালী গ্রামের হাসান আলী শেখের ছেলে। তারা ওই এলাকার সন্ত্রাসী। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে ছবি তুলে তারা এমন কোন কাজ নেই তা করতে দ্বিধাবোধ করতো না। তারা এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ২০২০ সালে ১৬ জুলাই দু’ভাইসহ তাদের গ্যাংয়ের সদস্যের হাতে মশিয়ালী এলাকায় ট্রিপল মার্ডার হয়। তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকাবাসি মিষ্টি বিতরণ করে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তারা এলাকায় এসে আবার সন্ত্রাসী কার্যকালাপ শুরু করে।
আরও পড়ুন : চাঁদা না দেয়ায় সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ে সন্ত্রাসী হানা
এলাকাবাসি আরও জানান, জাফরিন কোন অন্যায় করলে বড়ভাই জাকারিয়া সমাধানের নাম করে সেখানে গিয়ে পরবর্তীতে তাকে আরও উসকে দেয়। এতে সে আরও সাহস পেয়ে যায়। পরবর্তীতে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে ভয় পেত না সে।
খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: কামাল হোসেন খান বলেন, জাফরিনের নামে থানায় ট্রিপল মার্ডারসহ ৯ টি মামলা রয়েছে। রোববার সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং কারখানায় চাঁদা চাইতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় জাফরিন। রাতে তার বড়ভাই জাকারিয়া ও অন্য আসামি মার্ক পল্টুর নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজি মামলা হয়। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।