পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। নেশায় একজন গীতিকার। কিন্তু তার ফাঁকেই তিনি বিদ্রোহী কবি তথা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, কাব্যগ্রন্হ, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ইংরেজিতে অনুবাদ করে ইতিমধ্যেই সাড়া জাগিয়েছেন আত্মপ্রচার-বিমুখ গিয়াসউদ্দিন দালাল। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়াতে কেন তিনি উঠে আসলেন না এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।
টেলিফোনে এক সাক্ষাতকারে তার এই অভিমানের কথা গিয়াসউদ্দিন দালাল অকপটেই জানালেন। বর্তমানে তিনি থাকেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের সাউথরেঞ্জ ইসমাইল হোমিওপ্যাথিক কলেজ রোডের ডলস হাউসে। ১৯৫১ সালের ২৬ আগস্ট তিনি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার মোড়ার গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম তালেব দালাল ও মাতার নাম জরিনা বেগম। ২০০৬ সালে চুরুলিয়া নবকৃষ্ণ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন নজরুল রচনাবলীর ইংরেজি অনুবাদের বিষয়টি তিনি অনুভব করেন। তারপর তিনি নজরুলের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্হ ‘অগ্নবীণা’-র ইংরেজি অনুবাদ শুরু করে শেষ করেন। কিছু না হলেও গিয়াসউদ্দিন দালাল ৫০০-র বেশি নজরুল কবিতা অনুবাদ করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেন। ‘অগ্নবীণা’ কাব্যগ্রন্থটির মধ্যে রয়েছে নজরুলের যুগান্তসৃষ্টিকারী কবিতা ‘বিদ্রোহী’, ‘কামালা পাশা’, ‘আনোয়ার ‘, ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘কোরবানী’, ‘মোহররম’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’-র। এটা কিন্তু কম কথা নয়। নজরুলের অন্যান্য কাব্যগ্রন্হগুলিও তিনি অনুবাদ চলমান। সবচেয়ে বড় কথা হল কাজী নজরুল ইসলামের তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস ইতিমধ্যেই তিনি ইংরেজিতে অনুবাদ করে বিশ্বের কোণে কোণে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই তিনটি উপন্যাস হল ‘ বাঁধন হারা’ (পত্র-উপন্যাস), ‘ মৃত্যুক্ষুধা’ ও ‘কুহেলিকা’। বাকি উপন্যাসগুলির অনুবাদের কাজ তিনি নি:শব্দে করে চলেছেন। ৫০০-র বেশি নজরুলগীতি, বিখ্যাত ধূমকেতু পত্রিকার নজরুলের প্রবন্ধ অনুবাদের কাজ তিনি শেষ করে ফেলেছেন।
৭৪ বছর বয়সী গিয়াসউদ্দিন দালাল নজরুল রচনাবলীর অনুবাদের কাজটি নি:শব্দে করে চলেছেন। একদিকে তিনি নিজেও একজন গীতিকর। অন্যদিকে তিনি নীরবেই নজরুল রচনাবলীর একজন আত্মপ্রচার বিমুখ অনুবাদক। তিনি এক্ষেত্রে মানসিকভাবে খুব দৃঢ়। ভীষণ আত্মপ্রত্যয়ী। ভীষণ জেদিও।
খুলনা গেজেট/এনএম