খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের
  ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত : রয়টার্স; জীবিত কারও সন্ধান মেলেনি : রেড ক্রিসেন্ট

অস্বাভাবিক হারে ক‌মে‌ছে রেমিট্যান্স, কম‌ছে রিজার্ভও

গেজেট ডেস্ক

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই আগের বছরের তুলনায় রেমিট্যান্সে ভাটা পড়ে গেছে। তবে সবচেয়ে কমেছে গত আগস্ট মাসে। বিদায়ী মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরে এসেছিল ২০৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে সাড়ে ২১ শতাংশ। শুধু তাই নয়, জুলাইয়ের তুলনায়ও আগস্টে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

রেমিট্যান্স প্রবাহ এ অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মুদ্রা পাচার। এ মুদ্রা পাচার ঠেকাতে না পারলে সামনে আমাদের আরও সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে। তিনি বলেন, দেশে যখন ডলার সঙ্কট চলছে তখন বেশি হারে বৈদেশিক মুদ্রা আসার কথা ছিল। কিন্তু হচ্ছে উল্টো। রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আর এ ভাবে চলতে থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানো কষ্টকর হবে। তিনি বলেন, ডলার সঙ্কট বেড়ে গেলে টাকার মান কমে যাবে। আর টাকার মান কমে গেলে সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করতে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। এতে বেড়ে যাবে মূল্যস্ফীতি। তিনি বলেন, এ জন্য নীতিনির্ধারকদের আগে ঠিক করতে হবে কী করণীয়। কারণ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে, নিরাপত্তার অভাব দেখা দিলে মানুষ দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। কষ্টার্জিত অর্থের নিরাপত্তার জন্য বিদেশে টাকা পাচার করে। এটা ঠেকানোর জন্য নীতির পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় আমাদের বড় সঙ্কট এড়ানো সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে বিদায়ী মাসে অর্থাৎ আগস্টে। যেমন, গত মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.০২ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিলে কমে নেমেছিল ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার। মে’তেও আগের মাসের প্রায় সমান অর্থাৎ ১.৬৯ বিলিয়ন ছিল। জুন ছিল ২.২০ বিলিয়ন ডলার। এর পর আবার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। জুলাইতে রেমিট্যান্স আসে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর গত আগস্টে কমে নেমেছে ১.৬ বিলিয়ন ডলারে। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট অর্থাৎ গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল প্রায় ৬ শতাংশ, সেখানে আগস্টে কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশ থেকে প্রতি মাসেই বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার হার বাড়ছে। বিপরীতে বেশি হারে রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল, কিন্তু হচ্ছে উল্টো। এর একমাত্র কারণ হলো বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসছে না। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। আর এ কারণেই খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। খোলা বাজারে প্রতি ডলারের বিপরীতে ক্ষেত্র বিশেষ ১১৮ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। যেখানে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও আমদানিকারকরা বলছেন, ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে কোনো ব্যাংকেই ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। হুন্ডির কারণেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কম আসছে। এ কারণে গত সপ্তাহে ৭টি মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ১০টি মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

এ‌দি‌কে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের আকার গত দুই বছর ধরে ক্রমাগত কমছে। গত বুধবার আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার (২৩.০৬ বিলিয়ন)। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করা হলে রিজার্ভ কমে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের (২২ বিলিয়ন) নিচে নেমে যাবে। এবার জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য সুদসহ ১১০-১২০ কোটি ডলার আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। দুই বছর আগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে রিজার্ভ ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে ধারাবাহিক কমছে রিজার্ভ, যা এখন পর্যন্ত কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম আরও বেড়েছে, যা রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে আমদানিতে ডলার কিনতে হবে আগের চেয়ে আরও ৫০ পয়সা বেশি দামে। কারণ অনেক ব্যাংকসীমার চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।

এতে আমদানি খরচ বাড়বে। এর প্রভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলার সংকটের পাশাপাশি নগদ ডলারের দামও বেড়েছে। এখন এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। দাম বাড়ায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বিক্রির অপরাধে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও সিলগালা করা হয়। ফলে মানি চেঞ্জারগুলোয় ডলার কেনাবেচা প্রায় বন্ধ। এতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে মুদ্রা বাজারে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নীতি সহায়তা দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে না পারলে সামনে কঠিন বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে না বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!