খুবি ছাত্র অর্ণব হত্যা মামলায় আসামি গোলাম রাব্বানিকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। এর আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ প্রেরণ করলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না আসায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ এর বিচারক মো: রাকিবুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে হেফাজতে নেওয়া অপর দু’জনকে শর্ত সাপক্ষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে এ মামলায় গ্রেপ্তার রাব্বানি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। গ্রেপ্তার গোলাম রাব্বানি গোবরচাকা এলাকার জনৈক রবিউল ইসলামের ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, রোববার দুপুরে অর্ণব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রাব্বানিকে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আদালতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না আসায় আদালত আগামী ৯ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করে কারাগারে প্রেরণ করে।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাত পৌনে ৯ টার দিকে সন্ত্রাসীরা গুলি ও পরে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে খুবি ছাত্র অর্ণব কুমারকে হত্যা করে। হত্যার পর ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অর্ণবের ৩ বন্ধুকে হেফাজতে নেওয়া হয়। শনিবার রাতে অর্ণবের বাবা মামলা দায়ের করার পর উর্ধতন কর্মকর্তারা তাদের তিনজনকে এক সাথে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু রাব্বানির কথাবার্তা অসংলগ্ন থাকায় তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, শেষ কলটি অর্ণবকে গোলাম রাব্বানি দেয় এবং তাকে ডেকে শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে আসতে বলে।
এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান মিঠু খুলনা গেজেটকে বলেন, আটক রাব্বানি হত্যাকান্ডের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। হেফাজতে নেওয়া খালিদ ও ফাহিমকে শর্ত সাপেক্ষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে এখন কোন কিছু বলা সম্ভব নয় বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।
তবে আদালত প্রাঙ্গণে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন গ্রেপ্তার গোলাম রাব্বানি। শুক্রবার রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝরে কাঁদতে থাকেন তিনি। বারবার বলতে থাকেন এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নন তিনি। খুলনায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তিনি। রবিবার মধুমেলায় অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার কারণে আর যাওয়া হয়নি।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা সাতক্ষীরায় থাকে। তার বিয়ের সকল আয়োজন ফাহিম ও অর্ণব করে। অর্ণবকে তার বাড়ি সাতক্ষীরায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু সময় না থাকার কারণে অর্ণব সেখানে যেতে পারেনি। এবার মধু মেলায় যাওয়ার সুবাধে শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে অর্ণবকে ফোন দেন তিনি। সে সময়ে অর্ণব খুবিতে অবস্থান করছিল। বিপরীত থেকে তাকে জানানো হয় আসছি। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে অর্ণব তেতুলতলা মোড়ে আসে। অর্ণবের আসতে দেরি দেখে রাব্বানি সামনের দিকে চলে যায়।
ফাহিম সিগারেট জ্বালানোর কিছুক্ষণ পর পল্লীমঙ্গল স্কুলের রাস্তা দিয়ে ১৫/২০ মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সকলের মুখে মাফলার ও একজনের হাতে অস্ত্র দেখে পাশের একটি গলিতে আমরা ৩ জন চলে যাই। সন্ত্রাসী সাজ্জাদের হোটেলের সামনে থেকে একজনকে মোটর সাইকেলে তুলে নেয়। এরপর তারা বিএনপি অফিস লক্ষ্য করে গালিগালাজ করতে থাকে। গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা আতংকিত হয়ে এসি গলিতে চলে যাই। পরে রাস্তার ওপর অর্ণবের হেলমেট ও মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখি এবং পরে অর্ণবকে তার গাড়ির পাশে পড়ে থাকতে দেখি। একজন পথচারীর সহায়তায় অর্ণবকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের খাতায় আমার নাম এন্ট্রি করা আছে। আমি দোষী হলে পালিয়ে যাব। বাসায় থাকব কেন। রাতে তাকে গোবরচাকা এলাকা থেকে তথ্য জানার জন্য থানায় নেওয়া হয়
খুলনা গেজেট/ টিএ