খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২

অভয়নগরে চিকিৎসক সংকট, রোগী দেখেন টেকনোলজিস্টও

অভয়নগর প্রতিনিধি

অভয়নগরে চিকিৎসক নেই রোগী দেখছেন টেকনোলজিস্টরা। এছাড়াও ৩ লাখ রোগীর জন্য ১০ জন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা গ্রহণের অপেক্ষায় জরুরি ও বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন প্রায়ই লেগে থাকে। হাসপাতালে আসন সংখ্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় অনেক রোগীকে বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় আধুনিক অপারেশন থিয়েটার বা ওটি বন্ধ রাখা হয়েছে। নেই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২৯ জনের মধ্যে ১০ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা। ডাক্তার সংকটের কারণে অনেক রোগী ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

২৪৭.১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট অভয়নগর উপজেলায় রয়েছে একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন। মোট ১২১টি গ্রামে জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। তাছাড়াও উপজেলার বাইরে মনিরামপুর, বসুন্দিয়া, নড়াইলের গোবরা, ফুলতলার বেজেরডাঙ্গা থেকে অনেক রোগী আসে এই হাসপাতালে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হওয়ায় সরকারি এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ এবং বহির্বিভাগে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত রোগী সামলাতে ১০ জন ডাক্তারকে প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয়। রোগীর চাপ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় অনেক রোগীকে দালাল চক্র ফুসলিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় আধুনিক অপারেশন থিয়েটার বা ওটি বন্ধ রাখা হয়েছে। দন্ত চিকিৎসক না থাকায় যন্ত্রপাতি গুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। ডেন্টাল সার্জন নাই। সেই রুমে এক পাশে বসে রোগী দেখছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রুহুল কুদ্দুস । তিনি দিনে ১৫/১৬ রোগী দেখেন। বাকি রোগীদের তার নওয়াপাড়া নুরবাগ নিজ চেম্বারে আসতে বলে জানান অনেক রোগী। পুরুষ, মহিলা, প্রসূতী ও করোনা রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড রয়েছে। ছোটখাটো অপারেশন, এক্সরে, ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা সচল রয়েছে। একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে রোগীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি ওষুধেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

সমসপুর গ্রামের রিয়াজ হোসেন বলেন, এসে দেখি ডেন্টাল সার্জন একজনও নাই চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।

চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাওয়া চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার স্ত্রীকে নিয়ে খুলনায় যেতে হচ্ছে। তিনি সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার সংকট সমাধানের দাবি করেন।

ধোপাদী এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম জানান, গ্রাম থেকে সরকারি হাসপাতালে এসে হাড়ের ডাক্তার খুঁজে পেলাম না। এ বয়সে যশোর-খুলনায় যাতায়াত করা যেমন কষ্টের তেমন খরচের। কবে এক ছাদের নিচে সবসেবা পাবো এমন প্রশ্ন করে তিনি চলে যান।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমি চেম্বারে কোন রোগী দেখি না। দন্ত রুমে বসে আমি রোগীদের প্রাথমিক চিসিৎসা করি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আলিমুর রাজিব জানান, জনবল সংকট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় অনেক রোগী সেবা না পেয়ে অন্যত্র চলে যায়। যশোরের থেকে ডেন্টাল সার্জন ডাঃ সাবিহা তানজিম সপ্তাহে দু’একদিন আসে।তবে আমাদের হাসপাতালে গাইনি বিভাগ বন্ধ। এ বিভাগে ডাক্তার না থাকায় অনেক মহিলা রোগী চিকিৎসা গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। কর্তব্যরত ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে আরএমওকে প্রশাসনিক কাজ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে (ইউএইচএফপিও) সার্বক্ষণিক তদারকির কাজ করতে হয়। বাকি ৮ জন ডাক্তারের মধ্যে আবার তিনজনকে করোনা ইউনিটে কাজ করতে হয়। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৫৭ পদের মধ্যে জনবল রয়েছে ১০৫ জন। যে কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

তিনি আরো জানান, ফিল্ড স্টাফ ৫৭ জনের মধ্যে রয়েছেন ৩২ জন, নার্স ২৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ২৬ জন, সাপোর্ট স্টাফ ২৪ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন, ফিজিশিয়ান ১৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯ জন, মেডিক্যাল টেকনোলজি ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন, ডেন্টাল সার্জন একজন নাই, এএমসি একজন নাই এবং অন্যান্যে কাজের সাথে জড়িত ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন। ৫২টি পদে এখনও জনবল সংকট রয়েছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে তিনটি এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ২৬টি। বর্তমানে ৪০ ধরণের ওষুধ মজুদ রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে তিনি সহ অন্যান্য ডাক্তারদের পরিশ্রম বেশি হলেও হাসপাতালের প্রতি এলাকাবাসীর সুনজর রয়েছে। যে কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় একটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য ২৯টি কনসেনট্রেটর মেশিন, ৪০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ অন্যান্য পদগুলো সচল হলে প্রতিদিন অনেক রোগী সেবা নিতে পারবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের জন্য অন্যত্র যেতেও হবে না।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!