ম্যাচের বয়স তখন ৯৪ মিনিট, ইন্টার মিয়ামি একটা ফ্রি কিক পেলো। এরপর বাকি আর দুই মিনিটেরও কম। ম্যাচের ফল ড্র বলেই মেনে নিচ্ছিলেন সবাই। তবে মিয়ামির জার্সিতে যে এদিন ফুটবলের যাদুকরের অভিষেক হয়েছে। সেই ম্যাচ কিভাবে ড্র হয়!
হলোও না! বক্সের উপর থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে ক্লাসিক শটে লক্ষ্যভেদ করলেন তিনি। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কার কথা বলছি! হ্যাঁ লিওনেল মেসি। আজ মেজর লীগ সকারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়কের শেষ মুহূর্তের গোলে ক্রুজ আজুলকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইন্টার মিয়ামি।
এর আগে মেসিকে বেঞ্চে রেখেই একাদশ সাজান মিয়ামির আর্জেন্টাইন কোচ টাটা মার্টিনো। ফলে গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের প্রথমার্ধটা অপেক্ষাতেই কেটেছে দর্শকদের। মেসি মাঠে নামার আগেই অবশ্য লিড পায় মিয়ামি। বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রবার্তো টেলর।
বিরতি শেষে শুধু মাঠ নয় পুরো বিশ্বের চোখ ছিল মিয়ামির ডাগআউটে।
অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় ৫৪তম মিনিটে। একেবারে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড নিয়েই মাঠে নামেন মেসি। এ সময় তাঁর সঙ্গী হন সার্জিও বুসকেটস।
মেসি মাঠে নামার পর ১১ মিনিটের মাথায় লিড হারায় মিয়ামি। মেক্সিকান ক্লাব ক্রুজ আজুলকে সমতায় ফেরান ইউরিয়েল আনতুনা।
মেসির অভিষেকে মিয়ামির গ্যালারি যেন হয়ে ওঠে তারকাদের মঞ্চ। মিয়ামির অন্যতম মালিক ডেভিড বেকহাম, মেসির সাবেক সতীর্থ সার্জিও আগুয়েরো, বাস্কেটবল মহাতারকা লেব্রন জেমস, টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস এবং মডেল কিম কারদাশিয়ানকেও দেখা যায় দর্শক সারিতে।
মেসি অবশ্য মাঠে নেমেই মোহিত করা শুরু করেন সবাইকে। দুর্দান্ত রক্ষণচেরা পাস, বল নিয়ে চিরচেনা দৌড় এবং ড্রিবলিংয়ের যাদুতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে দর্শকে টাইটম্বুর গ্যালারি। যদিও অভিষেক ম্যাচে বল দেওয়া নেওয়াতে মানিয়ে নিতে আরও একটু সময় লাগবে তার।
তবে মেসি ‘প্রেজেন্ট’ যেন মুহূর্তেই বদলে দিয়েছে মিয়ামির খেলোয়াড়দের মেন্টালিটি। বিশ্বকাপজয়ীর সংস্পর্শে এসেই যেন জেগে উঠেছে তারা। পুরো ম্যাচের খেলা দেখে বোঝাত উপায় নেই গত ১৪ই মে’র পর থেকে জয়ের স্বাদ পায়নি।
মাঠের নামার পর বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়ান মেসি। ৮৭তম মিনিটে সতীর্থকে দিয়ে গোলও করান, যদিও অফসাইডের ফাঁদে সেটা বাতিল হয়ে যায়। ৯০তম মিনিটে মেসি নিজে ঢুকে পড়লেও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের বাধা পাড় হতে পারেননি। তখন অবশ্য ম্যাচের ফল ড্র বলেই মেনে নিচ্ছিলেন সবাই। কিন্তু তখনও যে মেসির যাদু দেখানো বাকি।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ফ্রি কিক পায় মিয়ামি। প্রতিপক্ষের বক্সের উপর পাওয়া সে ফ্রি কিকে বাকানো শটে মিয়ামিকে জয় এনে দেন মেসি। বল জাল স্পর্শ করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি আর যেন কেপে ওঠে পুরো ফ্লোরিডা শহর। অভিষেকটা বোধহয় এর চেয়ে রঙিন হতে পারতো না মেসির। এ যেন আসলেন, নামলেন, খেললেন আর দলকে জেতালেন! লেখার মতোই মেসির জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ।
খুলনা গেজেট/এনএম