খুলনা নগরীতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ইজিবাইক। চালকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। খুলনা সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে বৈধ-অবৈধ মিলে নগরীতে প্রতিদিন ১৫ হাজার ইজিবাইক চলাচল করে। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশের মতে এ সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। অবৈধ ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণে কেসিসি ও কেএমপির সমন্বয়হীনতার কারণে নগরীতে প্রতিনিয়ত যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের শুরুতে ইজিবাইক সীমিত আকারে চলাচল শুরু করে। প্রথমদিকে ইজিবাইক সংখ্যা কম থাকলেও পরবর্তীতে তা ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। এর সুফল থেকে এখন বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে কথা হয় চালক নুরুল ইসলামের সাথে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, কেসিসি যাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে কিছু লাইসেন্স প্রদান করে। কিন্তু দেখা যায় অনেক ইজিবাইক আছে তাদের কোন লাইসেন্স নেই। তারা প্রেস থেকে কেসিসির লোগো সম্বলিত ষ্টিকার কাচের সাথে জুড়ে দিয়ে রীতিমতো নগরীতে চলাচল করছে। তাদের আটকের ব্যাপারে পুলিশের তেমন ভূমিকা দেখা যায়না।
ময়লাপোতা মোড়ে কথা হয় আ: হালিমের সাথে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ভোরে বটিয়াঘাটা, কৈয়া, ডুমুরিয়া ও রূপসা থেকে অবৈধ ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশ করছে। এসব যানবাহনের কোন লাইসেন্স নেই। তারা খুলনা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অবৈধ ইজিবাইক বন্ধে কেসিসি’র পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনা। পুলিশ এসকল যানবহন ধরছেনা। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে এরা বেপরোয়া চলছে।
শিববাড়ি মোড়ে কথা হয় চালক আহাদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারণে নগরীতে অবৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাদের কারণে ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে মালিকের টাকা পরিশোধ করা দায় হয়ে পড়েছে। সংখ্যা বেশি বাড়ার কারণে অনেক সময়ে যাত্রী শুণ্য হয়ে নগরীতে ঘুরে বেড়াতে হয়। নকল ব্লুবুক ও ষ্টীকার দিয়ে এসকল ইজিবাইক চলছে। একটি লাইসেন্সকৃত গাড়ির বিপরীতে ৪ থেকে ৫ টি গাড়ি চলছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে আরও জানান।
জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশন যানবহন শাখার কর্মকর্তা শেখ মো: দেলোয়ার হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, কেসিসি এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৮০টি যাত্রীবাহী ও পণ্য পরিবহনের জন্য ২ হাজার ৯৬ টি লাইসেন্স প্রদান করেছে। বর্তমানে অবৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা ৫ থেকে ৭ হাজার। আর এ কারণে খুলনায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
খুলনা গেজেটকে তিনি আরও বলেন, অনেক ইজিবাইক মালিক নকল ষ্টীকার ও ব্লু-বুক তৈরি করে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। তাদের চিহ্নিত করে আটক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার থেকে ইজিবাইকের নবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রম চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে নবায়ন না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিজিটাল ষ্টীকার ও ব্লু-বুকের ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচলা হয়েছে। সেখানে কিউআর কোডের ব্যবস্থা করা হবে। স্ক্যান করলে আসল না নকল শনাক্ত করা যাবে। ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে খুলনায় আর কোন অবৈধ ইজিবাইক চলবেনা। সিটি করপোরেশন এলাকায় যত্রতত্র গাড়ির স্ট্যান্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ ডিসেম্বরের পর বিভিন্ন মোড়ে স্ট্যান্ড স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। যা ইতোমধ্যেই বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
খুলনা ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার খন্দকার হোসেন আহমেদ বলেন, মহানগরীতে বৈধ ও অবৈধ সব মিলিয়ে ইজিবাইক ২৫-৩০ হাজারের মতো। এসব যানবাহন চালকদের গাড়ী চালানোর মতো কোন যোগ্যতা নেই। তারা লেখাপড়া জানেনা। রাস্তায় চলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে কোন জ্ঞান তাদের নেই। প্রতিনিয়ত নগরীতে সড়ক দুঘর্টনাগুলো তাদের জন্য হচ্ছে। রোববার থেকে অবৈধ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
খন্দকার হোসেন আহমেদ বলেন, নগরীতে ৫টি স্থানে চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। শিববাড়ি মোড়, সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, গল্লামারি ও দৌলতপুর এলাকার চেক পয়েন্ট থেকে অবৈধ ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অভিযানের প্রথম দিনে ২১টি অবৈধ ইজিবাইক আটক করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব অবৈধ ইজিবাইক শহরতলীর গ্রাম থেকে নগরীতে প্রবেশ করছে। তাদের কোন লাইসেন্স বা কোন ষ্টীকার নেই। এরা নগরীতে যানজট সৃষ্টি করছে। অভিযান শুরু হওয়ায় কাল থেকে শহরের পরিবেশ কিছুটা উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ