খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  হাইকোর্টে ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ, আজ শপথ

অবশেষে জমি অধিগ্রহণ করেই কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু

পাইকগাছা প্রতিনিধি

অবশেষে জমি অধিগ্রহণে করেই কপিলমুনিতে নির্ধারিত স্থানেই নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারী) নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন ও অবহিত করেছেন খুলনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মারুফ উল আলম। এসময় পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের পক্ষে কথা বলায় দখলদারদের পক্ষে জনৈক শান্তনু সাধুসহ তার একভাই সোনা উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত ও কটুক্তি করলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিক এডিসি ও ইউএনও’র হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও এঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে কপিলমুনিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে।

এর আগে গেল বছরের ৯ ডিসেম্বর  কপিলমুনি হানাদারমুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক কপিলমুনির কপোতাক্ষ তীরবর্তী সরকারী চরভরাটি জায়গায় কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

স্থানীয়রা জানান, মন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধনের পর থেকে নির্ধারিত জায়গা নিজেদের দাবি করে সেখানে কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখলে নেয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ভাই কুঞ্জ বিহারী সাধুর ওয়ারেশরা। এরপর পর্যায়ক্রমে তারা সেখানে একাধিক পাকা ইমারত নির্মাণ করে। এরমধ্যে দফায় দফায় সরকার পক্ষে সেখানে কখনো লাল পতাকা আবার মালিক পক্ষে কখনো সবুজ পতাকা দেয়ায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সমস্যা সমাধানে গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) এর এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: শাহরিয়ার হক, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টুর নেতৃত্বে প্রশাসন উক্ত সম্পত্তির অবৈধ দখলদারদের সাথে ঘটনাস্থলে বসাবসির মাধ্যমে সকল সংকটের সমাধান করেন। এসময় এমপি ব্যাক্তিগতভাবে দখলদারদের টিনের ঘেরা-বেড়া অপসারণ বাবদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। মূলত এমপির সাথে সমন্বয়ের পর থেকে স্থানীয় কতিপয় মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে তারা বেপরোয়া গতিতে দখলীয় ও স্মৃতিকমপ্লেক্স’র নির্ধারিত স্থানে পাকা ইমারত নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণে সরকার সারাদেশে ৫টি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় সাংসদ আক্তারুজ্জামান বাবু, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব তপন ঘোষ, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব ইউসুফ হারুন, স্থানীয় সাংবাদিক এসএম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কপিলমুনিতে একটি কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাইকগাছার সাবেক ইউএনও, এসিল্যান্ডদের তত্ত্বাবধায়নে সংশ্লিষ্ট কানুনগো, সার্ভেয়ার, ইউএলএও, মুক্তিযোদ্ধসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অন্তত ১০ বার মাপ-জরিপপূর্বক কপোতাক্ষের চরভরাটি খাস জায়গায় উক্ত কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করেন। এরপর ঐ ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন মন্ত্রী।

এরপর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে নির্ধারিত জায়গা নিজেদের মালিকানাধীন বলে দাবি করে সেখানে প্রাচীর ও কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখলে নেয় স্থানীয় অমিত ও অভিজিত সাধু গং। অন্য পাশে পাকা ইমারত নির্মাণের কাজ শুরু করেন তাদের আরেক ভাই অনুপম সাধু। যার মধ্যে স্থানীয় এক দরিদ্র পরিবারের খরিদা রেকর্ডীয় জমিও রয়েছে। যা এস,এ ১৯৩ খতিয়ানের ৪২৬/৫৯৩ দাগের মধ্যে সম্পৃক্ত।

সর্বশেষ দখলদারদের বাঁধার মুখে সেখানে কমপ্লেক্স নির্মাণ বাস্তবায়নে সরকার নির্দারিত .২৫ একর দৈর্ঘ ২২০ ফুট ও প্রস্থ ৫০ ফুট জমি চাহিদার বিপরীতে সরকারি .১৩ একর ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন দাবিকৃত সাড়ে .১১ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা এডিসি (এলএ) মারুফ উল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও অবহিতকরণে আসেন। এসময় তারা নির্ধারিত স্থানের একাধিক ভিডিও আলোক চিত্র সংগ্রহ করেন।

এদিকে ঐসময় প্রশাসনের উপস্থিতিতে দখলদারদের কয়েকজন উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হোসেনের সাথে অসৌজন্য আচরণ ও কটুক্তি করেন। একপর্যায়ে তারা তাকে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত হলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীণ ৯ ডিসেম্বর রাজাকারদের অন্যতম প্রধান রাজাকার ঘাঁটি কপিলমুনির রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেন ১৫৫ জন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীকে। রাজাকার ঘাঁটি (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংসের পথে) থেকে উদ্বৃত বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনায় এ ঘাঁটির রাজাকারদের হাতে লেখা ১ হাজার ৬০১জন শহীদের তালিকা।  ক্যাম্প থেকে এদিন দেয়ালে পেরেকবিদ্ধ সৈয়দ আলী গাজী নামে এক মুক্তিযোদ্ধার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আত্মসমর্পণের খবরে সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের গণআদালতে এদিন ১৫১ জন রাজাকারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীণ গণআদালতের রায়ে এক সঙ্গে এত সংখ্যক রাজাকারের শাস্তির সম্ভবত এটাই একমাত্র ঘটনা।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!