খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
  সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ বিচারপতি শপথ নিয়েছেন
  এনআইডির তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে কাফরুল থানায় মামলা
পেমেন্ট বন্ধ থাকলেও ওয়েব সাইট চালু

অফিস-ফোন বন্ধ রেখে গাঁ ঢাকা এলটি অনলাইন মার্কেটিংয়ের চেয়ারম্যান-এমডির!

তরিকুল ইসলাম

প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন ‘এলটি অনলাইন মার্কেটিং’ এর চেয়ারম্যান ঝিনাইদহের শামিম ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর খোরশেদ আলম। তারা দু’জনে নিজেদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখেছেন। অফিসেও ঝুলছে তালা। তবে হোয়াটসআপ, ম্যাসেন্জার ও জুম মিটিংয়ে মাঝেমধ্যে কথা বলছেন ভূক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে। আর নতুন নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহকদের শান্ত রাখার পাশাপাশি ফের প্রতারণার মাধ্যমে আরও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

এদিকে, কোম্পানী থেকে টাকা উইড্রোর বিষয়ে প্রায় প্রতিদিন রাতে অনলাইনে বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা যুক্ত হয়ে মিটিং করে যাচ্ছেন। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  উইড্রো চালু করার দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারী ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের আড় পাড়ায় এমডি খোরশেদ আলমের বাড়িতে অবস্থান করেন ওই এলাকার ২৫/৩০ জন গ্রাহক। বাড়িতে না পেয়ে অনলাইনে গ্রাহকরা মিটিংয়ের আয়োজন করলে এমডি যুক্ত হয়ে দ্রুত পেমেন্ট চালু করার বিষয়ে আশ্বাস্ত করেন।

আরও পড়ুন: এবার ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘এলটি অনলাইন মার্কেটিং’

প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গেল বছরের জুনের পরে যারা এখানে আইডি, ডিলার কিংবা শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন তাদের মূলধনের প্রায় শতভাগই পড়ে রয়েছে কোম্পানীতে। তবে শুরুর দিকে যারা আইডি খুলেছিল তারা এড (বিজ্ঞাপন) ভিউ ও জেনারেশন তৈরির (নতুন লোক ঢুকানো) মাধ্যমে কিছু টাকা তুলতে পেরেছেন। কিন্তু নতুন আইডি খোলাসহ ডিলার, শেয়ার, রিসেলার (রিচার্জ) ও ১৪/২০ নামক বিভিন্ন অফারের নামে তাদের থেকে সেই টাকার অধিকাংশই ফের হাতিয়ে নিয়েছে। অর্থ-সম্পদ নষ্ট করে অধিকাংশ গ্রাহক এখন নিঃস্ব। আবার স্টার গ্রাহকদের অধিকাংশই তাদের আওতায় যুক্ত করা অন্য গ্রাহকদের রোষানলে পড়ার শঙ্কায় এলাকা ছাড়তে হয়েছে। এসব গ্রাহকদের মধ্যে সরকারী চাকুরীজীবি, কোম্পানীতে চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, বেকার যুবক, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লোক রয়েছে। অনেকেই লাখপতির স্বপ্নে এলটিতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তাদের পূর্বের পেশাও বাদ দেয়। ফলে এখন চরম মানবেতর জীবন পার করছেন তারা।

মাগুরার শ্রীপুরের টিপু সুলতান নামের এক গ্রাহক জানান, তিনি ৫৩ হাজার টাকা কোম্পানীতে দিয়ে কোন টাকাই তুলতে পারেননি। তার ওয়ালেটে ৬০ হাজার টাকার মত ব্যালেন্স থাকলেও উইড্রো বন্ধ থাকায় ওঠাতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি আইডি খুললে একটি টি-শার্ট দেওয়ার কথা থাকলেও যোগদানের ৫/৬ মাসের মধ্যে কোন কিছুই পাননি।

খুলনার কয়রার উপজেলার বেশ কয়েকজনের অভিযোগ পাওয়া যায় যাদের আইডি থেকে কোন টাকা তুলতে পারিনি। এছাড়া কয়রার অনেকেই হয়েছেন নি:স্ব, খুইয়েছেন অর্থ-সম্পদ।

অফিস-ফোন বন্ধের বিষয়ে এমডির হোয়াটসআপে ( ০১৯২১-১০৬০৬৮) ম্যাসেজের মাধ্যমে জানতে চাইলে প্রথমে বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে পুনরায় তিনি জানান, সকল কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে। অফিস ও ফোন খোলা রয়েছে। তবে অফিসের ঠিকানা ও সচল সিমের নম্বর দিতে বললে উল্টে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কি কারণে দিতে হবে, আপনি কি মেম্বর? তিনি আরও জানান, গ্রাহকদের পেমেন্ট দ্রুত দেয়া হবে এবং শাড়ি ও থ্রি-পিচ বিক্রি শুরু করবেন সোমবার থেকে।

প্রসঙ্গত, টি-শার্টসহ বেশ কিছু পন্যের ছবি দিয়ে একটি ই-কমার্স ওয়েব সাইট চালু করে তারা। তবে সেখান থেকে রেফার আইডি ছাড়া কোন পন্য কেনা যায় না। মূলত তারা এড ভিউ ও জেনারেশন কমিশন দেওয়ার কথা বলে দ্রুত লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে। গ্রাহকরা এক হাজার টাকা দিয়ে আইডি খুললে পাবেন একটি টি-শার্ট। আর বিজ্ঞাপন দেখে ২২০ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন পাবেন ১২ টাকা। সে হিসেবে শুধু এড ভিউতে ১টি আইডির বিপরীতে আয় হবে ২ হাজার ৬৪০ টাকা। আর ১৪ টি আইডি খুললে তাকে দেয়া হয় ‘ওয়ান স্টার, ১৪৪ টি আইডি খুললে ‘টু স্টার’ এভাবে থি্র স্টার, ফোর স্টার হওয়ার মাধ্যমে গ্রাহকরা লাখপতি হতে পারবেন বলে কোম্পানীর পক্ষ থেকে বলা হতো।

বেকারত্বের সুযোগে খুলনা বিভাগসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের টার্গেট করে ৪০ লাখের বেশি আইডি থেকে ৪০ কোটির ওপরে টাকা লুফে নিয়ে কিছুদিন গ্রাহকের ওয়ালেটের টাকা বিকাশের মাধ্যমে উইড্রোর সুযোগ দেয়। শুধুমাত্র আইডি খোলার মাধ্যমে নয়, নানা ধরণের অফার দিয়ে গ্রাহকদের থেকে সংগ্রহ করেছে আরও কোটি কোটি টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে কোম্পানীর নামে সংগ্রহ করা একটি ট্রেড লাইসেন্সের কপি পাওয়া যায়। সেখানে কোম্পানীর ঠিকানা দেয়া হয়েছে ২১৩/৪ এফ-৩ শাপলা হাউজিং পশ্চিম আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭। তবে গ্রাহকরা জানায়, ঢাকার মিরপুর ১০ এ তাদের অফিস ছিল। তাছাড়া ওয়েব সাইটে জয়েন্ট স্টোক কোম্পানী এন্ড ফার্ম বাংলাদেশ থেকে নেয়া একটি সনদ পাওয়া যায়। যার নম্বর সি ১৬৮৭২০/২০২১। তবে সনদে কোন স্বাক্ষরের দেখা মেলেনি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!