মাত্র আট মাস আগেও শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন ছিল খুবই বেমানান। ফোন ব্যবহারে অভিভাবকের ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত ১৫ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভিডিও ক্লাস আপলোড করছে। ফলে বইয়ের পরিবর্তে যুক্তিসঙ্গত কারণেই শিক্ষার্থীর হাতে শোভা পাচ্ছে স্মার্টফোন। তবে স্মার্টফোন শিশুরা কিভাবে ব্যবহার করছে? এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকরা বলছেন, মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন ডিজিটাল আসক্ত না হয়, সেদিকে শিক্ষক ও অভিভাবক সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ক্লাসগুলো ইউটিউবে আপলোড না করে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক জুম-অ্যাপে শিক্ষার্থীদের সংযোগ করলে নির্ধারিত সময় শেষে শিশুদের অফলাইনে রাখা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
নগরীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইনে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেন তারা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে যুম সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি অথবা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেইজে তা আপলোড করে থাকেন। ফলে ইচ্ছা না থাকলেও সন্তানের হাতে ইন্টারনেটসহ স্মার্ট ফোন দীর্ঘ সময়ের জন্য তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে অভিভাবকরা।
বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রতি করা জরিপ বলছে, স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মোবাইল ফোনে পর্ণগ্রাফি দেখে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঢাকা শহরে ৭৭ ভাগ শিক্ষার্থীই মোবাইল ফোনে পর্ণগ্রাফি দেখে নিয়মিত। তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ চৌধুরী গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন চলমান ধর্ষণের পেছনে পর্ণগ্রাফি দায়ী।
জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে নিয়মিত ক্লাস আপলোড করেন শিক্ষকরা। খুলনা জিলা স্কুল, করোনেশন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নৌবাহিনী পাবলিক স্কুল, খুলনা পাবলিক কলেজের মত স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তাদের ফেসবুক পেইজে এবং শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ক্লাস আপলোড করা হয়। তবে একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা মোবাইলে কি দেখে কি করে তাই নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন থাকি।
ডাঃ তরিকুল ইসলাম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সহকারী অধ্যাপক তার দুইটি সন্তান খুুলনার দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৯ম শ্রেণি ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, আমি কখনোই আমার ছেলেদের এসএসসি পরীক্ষার আগে মোবাইল ফোন হাতে দিতাম না কিন্তু এখন পরিস্থিতির কারণে আমাকে দুই ছেলেকেই স্মার্ট ফোন কিনে দিতে হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকি। ক্লাস দেখতে দেখতে অন্য কোথাও ঢুকলো কি না। নিষিদ্ধ কোন কিছু দেখলো কি না। এক্ষেত্রে ক্লাসগুলো ফেসবুক-ইউটিউবে আপলোড না করে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক জুম-অ্যাপে শিক্ষার্থীদের সংযোগ করলে নির্ধারিত সময় শেষে শিশুদের অফলাইনে রাখা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএফএম নাজমুস সউদ বলেন, অপরিপক্কতার কারণে যেন শিশুরা লাইনচ্যুত না হয়। সম্প্রতি শিশুরা স্মার্টফোন হাতে পেয়ে ক্লাসের ফাঁকে আসক্ত হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক গেম, নিষিদ্ধ ওয়েব সাইট ভিজিটে। শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অভিভাবকদের উচিত হবে বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুদের মোবাইল ফোন কিনে না দিয়ে অভিবাবকের মোবাইল ব্যবহার করে ক্লাসে এটেন্ড করতে দেয়া এবং নিজে খেয়াল রাখা।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ হাসান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ফোন বা অনলাইন সম্পর্কে কতোটুকু ধারণা আছে? স্মার্টফোন হাতে পেয়ে অপব্যবহার করছে না তো? যদি ফোনের অপব্যবহার হয়, সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ক্ষতির পাল্লাটাই ভারী হবে। টিভিতে ক্লাস দেখতে রিমোট শিশুদের কন্ট্রোলে। ভিডিও ক্লাস দেখতে স্মার্টফোন শিশুদের নাগালে। অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, শিশুরা ক্লাসের নামে টিভিতে কার্টুন বা অন্যকোন অনুষ্ঠানে আসক্ত কি না। আবার ভিডিও ক্লাসের নামে নিষিদ্ধ কোন ওয়েব সাইটে শিশুরা আসক্ত হচ্ছে কি না। মোড়ে-মোড়ে মোবাইল হাতে শিশুদের আড্ডা। আসলে ওরা কি করছে? মোবাইল পেয়ে কোন পথে শিশুরা? এসব দিকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের উভয়কে খেয়াল রাখতে হবে।
খুলনা গেজেট / এমএম