তাপমাত্রার পারদ দিন দিন বাড়ছে। তাপপ্রবাহে পুড়ছে গোটা খুলনা বিভাগ। তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না ঘর থেকে। অনেকেই বের হচ্ছেন ছাতা নিয়ে। গরমে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবীরা।
শনিবার (২০ এপ্রিল) যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর খুলনায় আজ চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, খুলনা বিভাগে আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। টানা তিন দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। শনিবার (২০ এপ্রিল) যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৫ শতাংশ বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে গত বছরের ১৯-২০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এবারও তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রায রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এর আগের ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।
এছাড়া আজ যশোর জেলায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, খুলনায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ রেকর্ড করা হয়েছে। আজ খুলনায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। যা আরও দুই-তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চলতি মাসজুড়ে তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকার রিকশায় বসে ছিলেন চালক রফিকুল। তিনি নগরীর বানরগাতি এলাকার বাসিন্দা। রফিকুল বলেন, প্রচণ্ড গরম। এই গরমে যাত্রী তেমন মিলছে না। যাত্রী না থাকলে রোজগারও হয় না। এই গরমে মানুষ কম বের হলেও আমাদের পেটের দায়ে বের হতে হয়।
তিনি বলেন, অসহ্য গরম। এই গরমে বার বার গলা শুকিয়ে আসছে। ঠিকমতো রিকশাও চালানো যায় না। বাতাসের সঙ্গে মনে হচ্ছে গরম ভাপ উড়ছে। বৃষ্টি হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
যশোর শহরের দড়াটানা মোড়ের তরমুজ বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, তরমুজ ঢেকে রাখলে ক্রেতারা দেখতে পায় না। এমনিতেই শহরে লোক নেই, ক্রেতাশূন্য। আর আলগা করে রাখলে রোদে তরমুজ শুকিয়ে যাচ্ছে। বেচাকেনা তো নেই বললেই চলে।
কাজীপাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, দুই বছর আগে করোনার সময় যে লকডাউনের চিত্র দেখেছি, আজকে যশোরে সেই চিত্র দেখলাম। রাস্তায় একটা মানুষও নেই। সকাল থেকে ১২০ টাকা আয় করেছি।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ থেকে জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০২৩ সালের ১৯-২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও ২০০৫ সালের ২ জুন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১২ সালের ৪ জুন ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৪ সালের ১৩ মে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আরও পাঁচ দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে অভিভাবকদের মাঝে। আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ফলে ২৮ এপ্রিল থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
খুলনা গেজেট/এমএম