খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা বেতারের রম্য নাটিকা ‘আয়না’র রচয়িতা অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক (৭৮) আর নেই। শুক্রবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি খুলনা মহানগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক নিঃসন্তান ছিলেন।

অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক কলেজে অধ্যাপনার পাশাপশি ছিলেন খ্যাতিমান গীতিকার, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। খুলনার এ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ছোট ভাই অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিন বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। ফুসফুসে পানি জমে গিয়েছিল। আমাদের পৈত্রিক বাড়ি গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া। দেশ স্বাধীনের আগ থেকে ফুলতলার দামুদারে থাকতেন বড় ভাই অচিন্ত্য কুমার। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থা খারাপ হলে রাত ৮টায় আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে রাতেই মারা যান। আজ দুপুর ১টায় ফুলতলা কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

অচিন্ত্য কুমার ভৌমিকের স্ত্রী মিতা ভৌমিক বলেন, তিনি খুলনার সরকারি সুন্দরবন কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজেসহ যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন কলেজে বাংলার অধ্যাপক ছিলেন। সর্বশেষ ২০০৪ সালে সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অবসরে যান।

সমাজের অভ্যন্তরে বাসা বেঁধে থাকা নানা সমস্যা, অসঙ্গতি, ত্রুটি, বিচিত্র অপরাধের ধরণ প্রভৃতি অত্যন্ত চমৎকারভাবে আয়না অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক। অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক রচিত ওই ধারাবাহিক নাটিকা পর্বের প্রধান আকর্ষণ ছিল সুরোত। সুরোত ছাড়াও আয়না’র আরো দু’টি চরিত্র হলো ‘ইজ্জত’ ও ‘ময়না ভাবী’। ত্রি-চরিত্রের সমন্বয়ে সংক্ষিপ্ত স্থিতির নাটিকায় সমাজের বিভিন্ন অপরাধের বাস্তব চিত্র অত্যন্ত সফলভাবে তুলে ধরার পেছনে সুরোতের সুদক্ষ ও প্রাণবন্ত অভিনয় ছিল তুলনাহীন। আয়না প্রচারের নির্ধারিত দিনে শ্রোতাদের মনে করিয়ে দিতে হয় না, সবাই আগে থেকেই শুক্রবার হলে রেডিও খুলে বসে থাকেন আজ আয়না হবে।

অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক আজীবন শিক্ষকতা আর শিল্প সাহিত্যের মধ্যে নিজেকে সমর্পিত রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন সাদাসিদা প্রকৃতির আটপৌরে একান্ত বাঙালিয়ানায় সিদ্ধ একজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। লোভ-বিলাসিতা-কৃত্রিমতা কখনও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। জীবনভর প্রচুর লিখেছেন, একাধারে গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, ছোট গল্প লেখক এমনই শিল্প-সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। রম্য রচনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত দুই বাংলার শ্রোতাদের কাছে সমাদৃত তাঁর রচনা রম্য নাটিকা ‘আয়না’ কথা সবাই জানেন। আধুনিক গান, গণসংগীত, দেশাত্মবোধক গান এবং নানা ধরনের লেখালেখির মধ্যে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর এই অন্তর্ধানে সমাজের যে সংকট সৃষ্টি হলো তা পূরণ হবার নয়। আজীবন তিনি সমাজের নিচুতলার শ্রমজীবী মানুষের কথা, সাধারণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কথা ভেবেছেন, যার বহিঃপ্রকাশ তাঁর নাটক, ছোট গল্প ও গণসংগীতে দৃশ্যমান।

কলেজ জীবন থেকে তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সংস্পর্শে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি বাম রাজনৈতিক দলের সাথেও যুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় তাঁর জন্ম হলেও দীর্ঘদিন থেকেই খুলনার ফুলতলার দামোদর গ্রামে থাকতে শুরু করেন। পরবর্তী সেখানে ঘরসংসার করে বসতবাটী গড়ে তোলেন এবং অত্র এলাকায় বাম রাজনীতির নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিশেষ করে কৃষকনেতা প্রয়াত কমরেড কামরুজ্জামান লিচু এবং কিংবদন্তী শ্রমিকনেতা প্রয়াত কমরেড হাফিজুর রহমান ভূইয়ার সাথে তাঁর নিবিড় সখ্যতা হয়। সে কারণে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনও লক্ষণীয়, যা তাঁর শিল্প-সাহিত্য চর্চাকেও প্রভাবিত করে। তিনি কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সরকারি বিএল কলেজের স্বনামধন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক মুক্তি মজুমদার ও প্রফেসর মুহম্মদ কায়কোবাদ-এর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন।

শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি খুলনা জেলা সভাপতি কমরেড এড. মিনা মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনসার আলী মোল্লা, উপজেলা জেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন, অধ্যাপক সুশান্ত সরকার, অধ্যাপক মোস্তানিসুর রহমান নিলু, অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা প্রভাষক রেজওয়ান রাজা, প্রভাষক গৌতম কুমার কুন্ডু প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলমসহ এলাকার বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। শেষকৃত্যের পূর্বে প্রয়াতের মরদেহে পুষ্পস্তবক প্রদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন।

অপরদিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কথা সাহিত্যিক, রম্য লেখক ও বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার কেন্দ্রীয় অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমাবেদনা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টি খুলনা জেলা সভাপতি কমরেড এড. মিনা মিজানুর রহমান, মহানগর সভাপতি কমরেড শেখ মফিদুল ইসলাম, জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনসার আলী মোল্লা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক কমরেড এস এম ফারুখ-উল ইসলাম, জেলা ও মহানগর সম্পাদকম-লীর সদস্য কমরেড দেলোয়ার উদ্দিন দিলু, কমরেড গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায়, কমরেড শেখ মিজানুর রহমান, কমরেড মনির আহমেদ, কমরেড খলিলুর রহমান, কমরেড আব্দুস সাত্তার মোল্লা, কমরেড নারায়ণ সাহা, কমরেড আমিরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য শেখ সাহিদুর রহমান, কমরেড মনিরুজ্জামান, কমরেড সন্দীপন রায়, কমরেড রেজাউল করিম খোকন, কমরেড আঃ হামিদ মোড়ল, কমরেড কৌশিক দে বাপী, কমরেড মোঃ আলাউদ্দিন, কমরেড মনির হোসেন, কমরেড বাবুল আখতার, কমরেড আরিফুর রহমান বিপ্লব, কমরেড অজয় দে, কমরেড এড. কামরুল হোসেন জোয়ার্দ্দার, কমরেড হাফিজুর রহমান, কমরেড গৌরী মন্ডল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!