খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

১৬ বছরে খুলনায় এবারই প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে কোন প্রভাব পড়েনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় প্রতিবছরই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে দেশের উপকূলে। এর কোনো কোনোটি সরাসরি আঘাত করেছে খুলনায়, হয়েছে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

এছাড়া কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি কিংবা বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। কিন্তু গত ১৬ বছরের মধ্যে এবারই তার ব্যতিক্রম হলো। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কোনো প্রভাবই পড়েনি খুলনায়। ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কোনোটিই না হওয়ায় স্বস্তিতে ছিল মানুষ।

রোববার (১৪ মে) খুলনায় কোনো ঝড়ো বাতাস হয়নি। আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকলেও হয়নি বৃষ্টি। মোখার প্রভাবে নদীর পানিও বাড়েনি। মোখার কারণে তেমন কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও ছিল না উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, মোখার প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়েনি। উচ্চতা স্বাভাবিক রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সম্পর্কে খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা অন্যবারের ঘূর্ণিঝড় থেকে একটু আলাদা। আগের ঘূর্ণিঝড়গুলোতে ঝড়ের অগ্রভাগে মেঘ ছিল। অগ্রভাগের মেঘ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি হতো। এবার মেঘ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের উপরে সীমাবদ্ধ ছিল। সে কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে আঘাত করা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনায় এখনও বৃষ্টি হয়নি।

আবহাওয়া অফিসসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ বছরে কমপক্ষে ১৪টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে দেশের উপকূলে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে ১০/১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আঘাত করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। এতে বাগেরহাটে ৯০৮ জন ও খুলনায় ৪৫ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি লোকালয় ও সুন্দরবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এরপর ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’য় খুলনায় নিহত হয়েছিল ৫৭ জন, সাতক্ষীরায় ১১ জন এবং বাগেরহাটে ৮ জন। প্রাণহানির পাশাপাশি বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

২০১৩ সালের ১৬ মে দেশের নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’। এর প্রভাবে খুলনা উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করে, খুলনায় ছিল ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি। ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করে, এর প্রভাবে খুলনায় ব্যাপক বৃষ্টি হয় এবং সেই সঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাস। ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। এর প্রভাবে খুলনায় বৃষ্টির সঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাস।

২০১৯ সালের ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’র আঘাতে খুলনায় ৪ হাজার ৬৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাতে খুলনায় গাছ চাপা পড়ে ২ জন নিহত হয়। সুন্দরবনের ৪ হাজার ৫৮৯টি গাছ ও সাড়ে ৯ হাজার ঘরবাড়ি, ২ হাজার ৭৭২টি চিংড়ি ঘের ও পুকুর প্লাবিত, ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়।

২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনায় লোকালয় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বনভূমি প্লাবিত হয়। লোকালয়ের ৮৫ হাজার ঘরবাড়ি ও সুন্দরবনের ১২ হাজার ৩৫৮টি গাছপালা ভেঙে যায়।

২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর আঘাতে খুলনার কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। প্রায় ৬ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, ৪/৫ ফুট উচ্চতার জোয়ারে তলিয়ে যায় সুন্দরবনের বনভূমি। মারা যায় ৪টি হরিণ।

২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে খুলনার কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়।

২০২২ সালের ৯ মে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে খুলনায় ভারী বৃষ্টি হয়। ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর আঘাতে কয়রায় বেড়িবাঁধ ধসে যায় এবং ১ হাজার ৬০০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!